বিজ্ঞাপন

ক্যাম্প ছাড়ছে রোহিঙ্গারা, দেদারছে ঢুকছে শ্রমবাজারে

May 10, 2018 | 7:59 am

।। ওমর ফারুক হিরু,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার: বাংলাদেশি আইনে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যাওয়ার বৈধতা নেই। তবে কক্সবাজারের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোয় সে আইন ভাঙার অভিযোগ উঠছে। ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা হরহামেশাই বেরিয়ে আসছে নানা ছল-ছুতোয়। কক্সবাজার শহরসহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় এসব রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ায় নানামুখি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কখনো ঘটছে গুরুতর অপরাধ কর্মকাণ্ডও।

বুধবার (৮ মে) এমন চার রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে দেখা মিলে কক্সবাজার শহরে। তারা লিংক রোড থেকে চট্টগ্রামমুখি যাত্রীবাহী ইউনিক পরিবহনের একটি বাসে উঠে। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এই যুবকদের মধ্যে দুই জন ছিল লুঙ্গি পরা আর অপর দুই জনের পরনে ছিল প্যান্ট। তাদের চোখে-মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। এছাড়া তারা যতটা সম্ভব চুপচাপ থাকার চেষ্টা করছিল। পরে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই ৪ জন’ই উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৫ দিনের জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া যাচ্ছেন ধান কাটার কাজ করতে। তাদের মধ্যে দুই জন উখিয়ার লম্বাসিয়া এবং অপর দুই জন বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

তারা জানায়, শুধু ওই ৪ জনই নয়। তাদের জানামতে পটিয়ার ধানকাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ২ শতাধিক রোহিঙ্গা। তারা বিভিন্ন সময় নানা কৌশলে চেক পোষ্ট ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে যায়। সেখানে তারা বাসা ভাড়া করে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে।

বিজ্ঞাপন

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে পটিয়ায় যাচ্ছে এমন প্রশ্নে এ যুবকরা জানায়, টমটম (ইজি বাইক) চালকের সাথে চুক্তি করেই চেক পোষ্ট পার হয়েছে। মূল ভাড়ার বাহিরে জনপ্রতি অতিরিক্ত ৭ শ টাকা করে দিয়েছে টমটম চালককে। আর কৌশল অনুযায়ী চেকপোষ্টের আগে তারা টমটম থেকে নেমে যায় এবং হেটে চেক পোষ্ট পার হয়ে আবার টমটমে উঠে।

পটিয়া গিয়ে কাজ করার জন্য কারা সহযোগিতা করছে এমন প্রশ্নে তারা জানায়, স্থানীয় কিছু দালাল এবং পূর্ব থেকে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে তারা ওখানে গিয়ে কাজ করছে। কেবল পটিয়াই নয় কক্সবাজার শহরের বিশাল শ্রমবাজারে রোহিঙ্গারা প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে বলে তাদের ধারণা।

হাইওয়ে বিভাগের তথ্য মতে, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক এবং টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে মোট ১০ টির মত চেক পোস্ট রয়েছে। এসব চেক পোস্টে মাদক ও চোরা চালান বন্ধের পাশাপাশি অবৈধভাবে শহরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদের আটকানো হয়। দৈনিক শতাধিক রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করে পুনরায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। এর পরেও রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এগুলো পার হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, গত ২৫ আগষ্ট থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার শহর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রবেশ করেছে। এদের বেশিরভাগই এ দেশের আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যত দিন গড়াচ্ছে কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায় ততটাই দক্ষ হচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। নারীরা স্থানীয়দের মতো বোরকা-নেকাব পরায় শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে। এরা কম্পিউটারে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে বিভিন্ন সময় তা কাজে লাগাচ্ছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যাপক সাইফুর রহমান জানান, মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাই বলে বাংলাদেশের ক্ষতি হোক এটা মেনে নেওয়া যায় না। এসব রোহিঙ্গা দেশের ভিতরে ঢুকে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে। দেশীয় শ্রমবাজার দখল করছে। স্থানীয়দের মধ্যে এটি নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে।

কক্সবাজারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন বলেন, দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ঠেকানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গারা মাদক পাচার থেকে শুরু করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে টেকনাফ ২ বিজিবি’র অধিনায়ক আসাদুজজামান চৌধুরী জানান, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার শহরের ২টি সড়কে বেশকিছু চেক পোস্ট রয়েছে। এর মধ্যে বিজিবি’র রয়েছে ৫ টি চেক পোস্ট। বাকিগুলো সেনাবাহিনী ও পুলিশের। এই চেক পোস্টগুলো মাদক ও চোরাচালান বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বরাবরেই সচেতন রয়েছে অবৈধ যাতায়ত ঠেকাতে। জোর দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাহিরে যেতে না পারে।

সারাবাংলা/এমএস/এমএইচ

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন