বিজ্ঞাপন

যে কারণে আমরা ব্যর্থ হই

June 23, 2023 | 5:42 pm

মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত

আমরা কোন বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করিনা। চিন্তা উদ্দীপক কোন বিবৃতি, কলাম, বক্তৃতা বা অন্য যেকোন বিষয়ের প্রতি মনযোগী হইনা। অন্যের যুক্তি বা মতের দ্বারা খুব সহজেই প্রভাবিত হই। নিজের যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগে সচেষ্ট হইনা। বই-পুস্তক খুবই কম পড়ি, যে কারণে ঐতিহাসিক বা অতীত রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষণের নিমিত্তে দু’চার লাইন সঠিকভাবে লিখতে পারিনা। ঘটনা বিশ্লেষণ তো বলাই বাহুল্য।

বিজ্ঞাপন

তথ্যসূত্র যাচাইয়ের মানসিকতা রাখিনা অথবা যাচাই করতে পারিনা। কোন বিষয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যমের ভুলভাল রেফারেন্স দিলে অথবা তথ্যদিলেও সেটাকে খুব সহজেই মেনে নেই। ভাষাগত দিক দিয়ে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। আমারা অনেকেই মাতৃভাষায় প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে পারিনা।

একটা প্রশ্নের উত্তরে যথাযথ শব্দের ব্যবহার করতে পারিনা। ইংরেজির অবস্থা তো খুবই নাজুক। বিশ্ববিদ্যালয় বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হিসেবে বৈশ্বিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে দুটি ভাষা ভালোভাবে জানার বিকল্প নেই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমাদের অযোগ্যতা চোখে পড়ার মত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অযাচিত ব্যবহার আমাদের সময়কে খুব নেতিবাচক ভাবে নষ্ট করছে। আমাদের বেশির ভাগ সময় এটার পিছনে ব্যয় করছি। এতে, যখন ফেসবুক ব্যবহার করছি তখন তো সময় নষ্ট হচ্ছেই, বাকি অনেক সময় ফেসবুকের বাহারি কন্টেন্ট মন-মগজে আলোড়িত হচ্ছে। একারনে, মুক্তচিন্তায় বা সুষ্ঠু বিশ্লেষণে বড় ব্যাঘাত ঘটছে।

বিজ্ঞাপন

সঠিক পরিকল্পনা আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়না। একটা এলোমেলো অবস্থার মধ্যে আমারা সময় পার করি। যে কারণে লক্ষও ঠিক থাকেনা, লক্ষ অর্জনে কৌশল গুলোও কাজে লাগেনা। একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মাধ্যমে সুশৃঙ্খল অবস্থান আশা করা যায়না। লেখালেখিতে আমাদের ভুলের যেন প্রতিযোগীতা লেগে যায়। লেখালেখির কলাকৌশল আমরা সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থীরাই শিখেছি। আমাদের অনেকের অবস্থা এমন যে, আমরা দায়সারাভাবে কাজ করে থাকি। কখনো শেখার চেষ্টাও করিনা।

আমাদের প্রায় সবার মধ্যে অন্যকে অনুকরণ-অনুসরণ করার প্রবণতা আছে। এটা নিঃসন্দেহে ভাল কিন্তু স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে নয়। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত স্বকীয়তা বিসর্জন দিচ্ছি। যে কারনে নতুনত্ব আসছে না বা নতুন কৌশল উন্মোচিত হচ্ছেনা। আমাদের সফলতার চিন্তা বাংলাদেশ কেন্দ্রিক। এটা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু বিশ্ব বাজারের দিকে নজর দেইনা বলে বিশ্ব মানের হতে পারিনা।

আমরা নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারিনা। সংগত কারনেই অন্যের কৌশল বা মতামত বা যুক্তি অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও মেনে নিয়ে নিজের মতামতকে মাটিচাপা দেই। বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড এবং সৃজনশীলতাকে বাদ দিয়া গৎবাঁধা মুখস্থবিদ্যার দিকে মনযোগী থাকার কারণে আমাদের ভিতরে উদয়কৃত জ্ঞানের স্ফুরণ ঘটেনা। বেশি সময় অন্য যেকোন কাজে মনযোগ ধরে রাখতে পারলেও বই পড়ার কাজে মনযোগ ধরে রাখতে পারিনা।

বিজ্ঞাপন

সর্বোপরি সময়কে ভাগ করে নিজের কাজে যথাযথ ব্যবহার করতে যে উদ্যম প্রয়োজন ততটুকুও উদ্যমী হইনা। আমরা শুধু হা-হুতাশ করি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে পাওয়ার ক্ষেত্রে যে ত্যাগ এবং অধ্যবসায় দরকার সেটা করতে অলসতা করি।

প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার আমাদের বহুমুখী উপকার করলেও আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করিনা। মার্শাল ম্যাকলুহানের মতে বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে বিভিন্ন দেশের সভ্যতা-ভব্যতা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব দ্রুতই জ্ঞান লাভ করা যায়। জ্ঞান অর্জনের এই দিকটাতেও আমরা মনযোগ দেইনা।

আমারা বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করে থাকি পাশ্ববর্তী দেশের কতিপয় মেধাবীমুখ কিভাবে বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানিগুলোর প্রধান হচ্ছে? আমরা এটাকে অসম্ভব মনে করি। এটা আদৌ অসম্ভব কোন বিষয় নয়। তাদের মত কঠিন পরিশ্রমী এবং কৌশলী হতে পারলে আমরাও বড় জায়গায় স্থান করে নিতে পারব।

আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সস্তা বিনোদন খুজে বেড়াই। অমানবিক ট্রল সংস্কৃতিতে নিজেকে সপে দেই। ঘন্টার পর ঘন্টা অন্যকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করি। অসুস্থ এই প্রতিযোগিতার ভিড়ে আমরা সুস্থ এবং সুন্দর জীবন দূরে ঠেলে দিচ্ছি। ফলে আমরা বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন