বিজ্ঞাপন

ঈদের আনন্দ কি সবার ঘরে পৌঁছে

June 29, 2023 | 7:05 pm

রাশেদুজ্জামান রাশেদ

মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে রেল, নৌ ও সড়কপথে ছুটছে মানুষ গ্রামে। এই যাত্রা নতুন করে নয়। প্রতিবছর একই ছবি দেখা যায় ঈদের আগে যানবাহনের টিকিট সংকট, সড়ক ও লঞ্চ দুর্ঘটনা, ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়া, সড়কের দুর্দশাসহ নানা কারণে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

সড়কের দুর্দশা আর ভাসমান মানুষের হতাশা কখনও বুঝি শেষ হবে না? বাস টার্মিনাল কিংবা রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায় শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত মলিন চোখে চেয়ে থাকে আর বলে, ‘স্যার কিছু টাকা দেন ঈদ করব’ কর্মজীবি মানুষ ছুটি পেয়ে বাড়ি ফেরে। ফলে আবেগ, অনুভূতির আর ভালোবাসা নিয়ে আসার পথে কোনো অসহায় মানুষ হাত পাতালে তাদের দেওয়া হয় সামান্য কিছু টাকা।

প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের চিরায়ত সংকট আর সমস্যার দৃশ্য না পাল্টাতে পারলে ঈদ মানে আনন্দ আর খুশি কি বলা যায়? ঈদ মানে আনন্দ-উল্লাস তাদের যারা সম্পদ লুণ্ঠন করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। আর যারা শোষিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা গড়ে দুঃখের পাহাড়। হতদরিদ্র মানুষের নিত্য দিনের জীবন চলে হাওয়াই মিঠাইয়ের মত। কখনও একটু পেটভরে খেতে পায় বলে মুখে হাসি ফোটে কিন্তু তৎক্ষণাৎ হাসি নিমিষেই মিশে যায় বাতাসে। বলছি নীলফামারী জেলা ডিমলা উপজেলা বালাপাড়া ইউনিয়নের মৃত রুবেলের কথা।

গত বছর ঈদে সড়কে রক্ত ঝড়ে মৃত্যু হয়েছে তার। সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে কিন্তু রেখে গেছে অভাবের সংসার। তার ছোট্ট সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সে ছিল। স্ত্রী আর সন্তানকে রেখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। দিন এনে দিন খাওয়া সংসারে সন্তান মানুষ হবে কেমন করে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে পড়াশোনা খরচ চালাবে কে? অসুস্থ হলে চিকিৎসা দিবে কে?

বিজ্ঞাপন

রুবেলের মত হাজারো সংসার আছে। যে আর্থিক অভাব অনটন দিন কাটছে আর বছরের পর ঈদ আসছে। আমরা বলছি সব দুঃখ ভুলে এসো কাতারে আনন্দ উপভোগ করি। আনন্দ বললে কি বাস্তবে আনন্দ করা যায়? করোনা মহামারির পর আমাদের দেশে ডাল, তেল, পিয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লামাগহীন উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

এত করে দিনমজুর সহ নিন্মবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাহলে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে সারা বছর কষ্টে দিনাতিপাত করে ঈদের দিন আনন্দ করলে কি জীবন আনন্দ বলা যায়?ঈদের আনন্দ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অতীতের ভুল ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আদর্শ গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ পরিচালনা করতে হবে। অন্যের মতামত বুঝার চেষ্টা করতে হবে।

ঈদ যদিও একদিনের বিষয় কিন্তু এর মধ্যে বাজার ব্যবস্থা, সড়ক ব্যবস্থা, শ্রমিকেরা বেতন-বোনাস, সাংস্কৃতিক আয়োজন, বিনোদন ব্যবস্থা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ অনেক আয়োজন। আর এগুলো পরিচালিত হয় রাষ্ট্রের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দ্বারায়। তাই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাও জান বাঁচাও। মুনাফালোভী বাজার সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

বিজ্ঞাপন

গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বেসরকারি বাণিজ্য বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে হবে। বাজার মনিটরিং জোরদার করা করতে হবে। টিসিবি’র পণ্য বিক্রির ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। গ্রাম পর্যন্ত ওএমএস এর বিক্রি সম্প্রসারিত করতে হবে। গ্রাম শহরের শ্রমজীবী জনগণের জন্য আর্মি রেটে রেশনিং ব্যবস্থা করতে হবে।

শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। যে সব মালিক শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা লে-অফ করেন সে সকল মালিকদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন ঈদযাত্রা স্বস্তিতে ও নিরাপদে করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে অসহায় হতদরিদ্র পরিবারে ঈদ সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। যেহেতু জনগণের ট্যাক্সে দেশ চলে। তাই দেশটা সবার, ঈদের আনন্দ হোক সবার। ঈদের আমেজ ছড়িয়ে দেওয়ার রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

লেখক: কলামিস্ট

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন