বিজ্ঞাপন

বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা

July 2, 2023 | 7:54 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। সদ্য বিদায়ী জুন মাসে প্রবাসীরা ২২০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটান্স পাঠিয়েছেন। এটি ২০২১ সালের জুলাই মাসের পর এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। জুন মাসের রেসিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ (১ ডলার সমান ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে এ যাবতকালে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ আমাদের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে। বিশেষ করে রিজার্ভ সংকটের সময়ে এই রেমিট্যান্স প্রবাহ অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই কোরবানি ঈদ সামনে রেখে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এটি অব্যাহত থাকবে নাকি কমে যাবে, তা নিয়ে কিছুটা অশঙ্কা আছে।’

বিজ্ঞাপন

২০২২-২৩ অর্থবছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স : ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই-২২ এ রেমিট্যান্স আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, পরের মাস আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৫৪ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ রেমিট্যাসন্স আসে। এরপর চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার, মার্চে রেমিট্যান্স আসে ২০২ কোটি ২৪ লাখ, এপ্রিলে কমে হয় ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ, মে মাসে আসে ১৬৯ কোটি ডলার এবং সব শেষ জুনে রেমিট্যান্স আসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

জানা গেছে, রেমিট্যান্সে চাঙ্গাভাবের পাশাপাশি ঈদের আগে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণের ৫২ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এর আগে গত ৮ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানি দায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ২৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। যা ২০১৬ সালের এপ্রিলের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের সর্বনিম্ন অবস্থান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছর শেষে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার, ২০২১ সালের ২৪ জুন ৩৫ বিলিয়ন ডলারে, ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলার, এরপর ২০২১ সালের ৩ মে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারে এবং ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রেকর্ড ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে সামান্য বেশি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার ,২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স : ২০২২ সালে প্রবাসীরা দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে, ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

অন্যদিকে ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার,২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন