বিজ্ঞাপন

যেখানে অনন্য হায়দরাবাদের সাকিব

May 11, 2018 | 4:37 pm

মোসতাকিম হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

কলকাতা নাইট রাইডার্স যখন এই মৌসুমে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া ঘোষণা দিয়েছিল, এর পরেই সাকিব আল হাসান তাঁর মতো ভাবলেশহীনভাবে বলেছিলেন, এসবে তাঁর কিছু যায় আসে না। এরপর সাকিবকে দলে নিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, তাও ভিত্তিমূল্যেই। তবে সেটা কত বড় দাও ছিল, এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছে। সবার আগে যে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে হায়দরাবাদ, তাতে সাকিব আল হাসানের অবদান মনে রাখার মতোই।

ক্রিকেটে আনসাং হিরো নামে একটা কথা খুব চলে। হায়দরাবাদের সাকিবের জন্য সেটা বোধ হয় কিছুটা খাটেই। এখন পর্যন্ত ম্যাচসেরার পুরস্কার পাননি একটিও, তাঁর চেয়ে বেশি সতীর্থ উদয় কৌল ও রশিদ খান বেশি উইকেট পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইপিএলে সাকিবের উইকেট ১২টি, তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন আরও নয়জন। তবে ব্যাটে-বলে সাকিব নিজের এবার ছাড়িয়ে যেতে পারেন ২০১৪ সালের ওই অবিস্মরণীয় মৌসুমকে।

২০১৪ সালে কেকেআরের শিরোপা জয়ে সাকিব অবদান রেখেছিলেন সামনে থেকে। ১৩ ম্যাচে ১১ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১৪৯.৩৪ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২২৭ রান। এবার রানে অনেকটা পিছিয়ে আছেন, ১১ ম্যাচে ১১৭ স্ট্রাইক রেটে রান ১৫৮। তবে ১২ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন সেবারের কীর্তি। ২০১২ সালের অভিষেক মৌসুমেই সাকিব পেয়েছিলেন ১২ উইকেট, এতোদিন পর্যন্ত আইপিএলে ওটাই ছিল এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড। এবার এর মধ্যেই সাকিব ছুঁয়ে ফেলেছেন সেই যাওয়ার জন্য সুযোগ পাচ্ছেন আরও অন্তত তিন বার। তিন ম্যাচ হাতে রেখেই হায়দরাবাদ নিশ্চিত করেছে প্লে অফ, সাকিব এখন পর্যন্ত খেলেছেন সবকটিতেই। এরপর প্লে অফে অন্তত একটি ম্যাচে তো খেলার কথাই। বল হাতে সাকিবের সেরা কীর্তি হতে পারে এবারই।

বিজ্ঞাপন

তবে পরিসংখ্যান দিয়ে তো আর সবকিছু মাপা যায় না। সাকিব কদিন আগেই হায়দরাবাদ থেকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এবারের দলটার সঙ্গে খুব দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। কলকাতার চেয়েও আপন মনে হচ্ছে এবার। মাঠেও যেন আত্মবিশ্বাসের ছাপ পড়েছে। কাল যেমন দিল্লির সঙ্গে ম্যাচে জেসন রয়কে যে বোল্ড করলেন, বাঁহাতি স্পিনারের এই ক্লাসিক ডেলিভারিটা অনেক দিন ধরেই ঠিক হচ্ছিল না সাকিবের। তবে নিজের ভালো খেলার সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে আসছে সেরাটা, সেটাই দেখা গেল।

কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্যই হায়দরাবাদ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও টিম ম্যানেজমেন্টেরও প্রাপ্য। বোলার সাকিবকে তারা কাজে লাগাচ্ছেন দারুণভাবে। কালই যেমন দিল্লির সঙ্গে পাওয়ারপ্লেতে এসেই এক ওভারে দুই উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বেঙ্গালুরুর সঙ্গে আগের দেখায় বিরাট কোহলি ম্যাচটা বের করে নিচ্ছিলেন, সাকিব এসেই ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। পাঞ্জাবের সঙ্গে অ্যারন ফিঞ্চ যখন ছয় মেরে হুমকি হয়ে উঠছিলেন, সাকিব পরের বলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। তবে ইডেনে কলকাতাকে স্তম্ভিত করে দেওয়া লিনের ওই রিটার্ন ক্যাচই মনে রাখবেন সবার চেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত সাকিব যে উইকেট নিয়েছেন, সবকটি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। শেষের দিকে রশীদ, কৌল, ভুবনেশ্বররা যখন ভরসা, মাঝের সময়ে সাকিবের ওপরেই আস্থা পাচ্ছে হায়দরাবাদ।

বিজ্ঞাপন

সাকিবের অবশ্য একটাই আফসোস থাকতে পারে, ব্যাটিংটা ঠিক মনমতো হচ্ছে না। আইপিএলে এ পর্যন্ত যে ৪০ ম্যাচে ব্যাট করেছেন, তার মধ্যে ১৮টিতেই ব্যাট করেছেন পাঁচ নম্বরে। এই মৌসুমে নিয়মিতই ব্যাট করছেন পাঁচে, বড় ইনিংসেরও সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ বেঙ্গালুরুর সঙ্গে ম্যাচে ৩৫ রান করা ছাড়া ত্রিশোর্ধে ইনিংস আর নেই। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি হিসেবে সেটা ছিল মহামূল্যবান। ওই ম্যাচেই পেয়েছিলেন দুই উইকেট, আইপিএলে এক ম্যাচে ৩০+ রান ও ২ উইকেট পাওয়ার কীর্তি এর আগে একবারই ছিল সাকিবের। তবে সবচেয়ে বড় কথা, বড় কিছু করতে না পারলেও সাকিবের ওপর আস্থা রেখে তাঁকে পাঁচেই নামাচ্ছে হায়দরাবাদ। সেটা নিশ্চয় সাকিবকে বাড়তি একটা আত্মবিশ্বাস দেবে।

হায়দরাবাদও সাকিবকে পেয়ে ভারসাম্যটা ফিরে পেয়েছে ভালোমতোই। আইপিএল শুরুর আগেই তা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তিন পেসার ও রশীদের লেগ স্পিনের সঙ্গে সাকিবের বাঁহাতের স্পিন দিচ্ছে বৈচিত্র্য। আর ব্যাটের সুযোগ তো আছেই। এর আগে কেকেআরের হয়ে দুবার শিরোপার সৌরভ পেয়েছিলেন সাকিব। এবার তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে, বাজিটা ঝুঁকি নিয়ে ধরে ফেলাই যায়।

 

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ এএম/এসএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন