বিজ্ঞাপন

ঢাকার সমাবেশ থেকে ‘রাজপথে নামার’ ঘোষণা: ফখরুল

July 9, 2023 | 9:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকার পতনে ‘রাজপথে নামার’ নতুন ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৯ জুলাই) বিকেলে সিলেট আলীয়া মাদরাসা মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বছরের পর বছর নির্যাতন ভোগ করছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে আটক রয়েছেন। তাকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর আমাদের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে কি আপনারা সবাই একমত, সবাই নামবেন, নেমেছেন নাকি? তাহলে আগামী ১২ তারিখ ঢাকায় একটা সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে নতুন ঘোষণা আসবে, সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রা শুরু হবে।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই যাত্রায় তরুণদের জেগে উঠতে হবে, সমগ্র মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবার জন্য, দেশনেত্রীকে মুক্ত করবার জন্য, তারেক রহমান সাহেবকে ফিরিয়ে আনবার জন্য, আমাদের মানুষকে মুক্ত করবার জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার জন্য এই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রামে রাজপথে মানুষ আর মানুষ, তরুণ আর তরুণ, যুবক আর যুবক। তাদের সমাহার দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকার যারা আমার বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদের পরাজিত করতে হবে। সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের রাষ্ট্র আমাদের নির্মাণ করতে হবে।’

জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে তারণ্যের এই সমাবেশ হয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জের থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেয়। নেতা-কর্মীদের মাথায় লাল-সবুজ-হলুদ রঙের টুপি এবং গায়ে ছিল রঙিন টি-শার্ট। গত ১০ জুন চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করে ইতোমধ্যে বগুড়া ও বরিশালের সমাবেশে শেষ করেছে। সিলেটের সমাবেশটি চতুর্থ। এরপর খুলনা ও ঢাকায় হবে সমাবেশ।

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুইটা নির্বাচন করেছে এর আগে। আর নির্বাচনটা কি? নির্বাচনটা হলো একটা অস্ত্র। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা নির্বাচনটা করে। আওয়ামী লীগের আমলে নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগ নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন করতে পারে- একথা বলে টেলিভিশনে।’

সমবেত নেতা-কর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কি আওয়ামী লীগের আমলে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে? আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই, হয় না। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না। গত দুইটা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের চরিত্রের মধ্যে সেটা নাই। তাদের চরিত্রের মধ্যে রয়েছে যে, দেশটা তাদের বাপের তালুকদারি, জমিদারি। ওরা রাজা আর আমরা সব প্রজা এটা তারা সবসময় মনে করে।’

‘সেই কারণে তারা সবসময় ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বেআইনিভাবে নির্যাতন করে, হত্যা করে, গুম করে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই নির্বাচন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধবংস করে দিয়েছে। আজ এখানে তরুণ-যুবক আছে। তাদের যদি অধিকার আদায় করতে হবে। একটা সুন্দর দেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা চাকরি পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে, স্বাস্থ্যের সুযোগ পাবে। সেজন্য এই তরুণদের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে। সেজন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের সার্বভৌমত্ব থাকবে, কাজ করে আয় করার ব্যবস্থা থাকবে, মানুষ সহজভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।’

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের খবরের কাগজে দেখবেন ডেঙ্গুতে ঢাকায় এখন পর্যন্ত ১০০ জনের ওপর মারা গেছে। এর মধ্যে শিশু আছে ৭০ জন। কোনোরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ডেঙ্গু দূর করার জন্য। চট্টগ্রামে আজ একটি পরিবারেরই সাত জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।’

‘বিদ্যুৎ খাতের লুটপাট’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইভালুয়েশনে বিদ্যুৎখাতকে বলা হয়েছে অপচুক্তি ও লুটেরা মডেল। কারা বলছে? সরকারের লোকেরা। কেন বলছে? কেন্দ্রগুলোতে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে গোটা বিদ্যুৎ খাত গত দুই অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন বলে বাংলাদেশ রোল মডেল। উন্নয়ন করছে তাই না? উন্নয়নে একেবারে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ১০ হাজার কোটি টাকায় যে পদ্মাসেতু করা যেতে সেই সেতু করতে লেগেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। উড়াল সেতু বানাচ্ছে, টানেল বানাচ্ছে পানির তল দিয়ে। কিন্তু আমার গরিব কৃষক তার ধানের দাম পাচ্ছে না, তার পণ্যের দাম পায় না। সারের দাম কমে না, বাড়তে থাকে। আর মা-বোনের বাজারে গেলে তেল-লবণ-ডাল-ডিম কিনতে পারেন না। কারণ, দাম তিন থেকে চারগুণ বেড়ে গেছে।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, জেলা সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, যুব দলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন ও ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য দেন।

এছাড়া নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহমিনা রুশদির লুনা, ছাত্র দলের জোনায়েদ আহমেদের মা আয়েশা বেগম ও ইফতেখার আহমেদ দিনারের বোন তাহমিন শারমিন তামান্না, নবীন ভোটার সাদিয়া কাউসার রুহি, সাবিহা জামান আরিফা বক্তৃতা করেন। পাশাপাশি সিলেটের বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা কলিম উদ্দিন মিলন, নাসের রহমান, এম এ সালাম, শাম্মী আখতার, জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন