বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি, অংশগ্রহণ পরিস্থিতি বুঝে

July 11, 2023 | 5:26 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা এবং নির্বাচন প্রতিহতের হুমকি দিলেও ভোটের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি! আন্তর্জাতিক চাপ এবং দলীয় অখণ্ডতা রক্ষার প্রয়োজনে নির্বাচনে যাওয়া লাগতে পারে— এমন হিসাব-নিকাশ থেকেই তাদের এ প্রস্তুতি। তবে নির্বাচনের অংশগ্রহণের বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার উপর। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ‘বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়, বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন নয়’— মোটামুটি এমনটিই সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির। কিন্তু চলতি বছরের ২৫ মে ঘোষিত নতুন মার্কিন ভিসা নীতির পর নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে দলটি। কারণ, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে ঘোষিত ওই ভিসা নীতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী ঘোষিত নতুন ভিসা নীতিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে না গিয়ে নির্বাচন প্রতিহতের যে অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল বিএনপি, সেখানে আর থাকতে পারছে না দলটি। নির্বাচন বানচাল, প্রতিহত বা বাধা দিতে গেলে মিত্র শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির ‘খপ্পরে’ পড়তে হবে বিএনপিকে। সে কারণেই, গত মে মাস থেকে ‘মেঠো বক্তৃতায়’ অনেক কিছু বললেও ‘নির্বাচন প্রতিহত করা হবে’ মর্মে কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না দলটির নেতারা। বরং তারা বারবার বলছেন, ‘নির্বাচনে আমরা অবশ্যই যাব। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। প্রতিটি আসনেই চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ। তৈরি করা হচ্ছে নির্বাচনি ইশতেহার। এ জন্য সাবেক আমলা ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ’র নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে একটি খসড়া ইশতেহার তৈরি করে দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠাবেন।

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারাদেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে বিএনপির। প্রতিটি সংসদীয় আসন থেকে তিন জনের নাম ঠিক করে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৯০০ জনের নামের একটি তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ তালিকা থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি আসনে তিন জন নয়, অন্তত পাঁচ জন করে প্রার্থী প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুতিতে আমাদের কোনো ঘাটতি নেই। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচন আয়োজন করলে বিএনপি কালকেই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত।’

বিজ্ঞাপন

মার্কিন ভিসা নীতির মারপ্যাঁচে পড়ে বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই আপনারা নির্বাচনে যাচ্ছেন, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। আসলে দলীয় সিদ্ধান্তটা কী?— এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত একেবারে পরিষ্কার। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আর মার্কিন ভিসা নীতির কথা বলছেন? ওটা নিয়ে যত ভাবনা ক্ষমতাসীন দলের। এ নিয়ে বিএনপির কোনো ভাবনা নেই। বিএনপি গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে বাধ্য করবে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করতে।’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা পরিবর্তনে বিশ্বাস করি আমরা। সেই হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু যেভাবে তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচন করতে চাচ্ছে, সেভাবে এ দেশের মানুষ নির্বাচন করতে চায় না, আমরাও চাই না। দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করলে পরিস্থিতি বুঝে আমরা নির্বাচনে যাব।’

সূত্রমতে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারলেই ‘জয় নিশ্চিত’— এ রকম ধারণা থেকে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। সে কারণে ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের আনা-গোনা বেড়েছে। গত নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন এবং যারা প্রার্থী হতে চেয়েও হতে পারেননি, তারা নিয়মিত গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ে ঢুঁ মারছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘নেকনজর’ পাওয়ার জন্য ‘সালাম-কালাম’ও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

শুধু ঢাকায় নয়, মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নিজ নিজ এলাকায়ও নির্বাচনি তৎপরতা চালাচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন তারা। কৌশলগত কারণে সরাসরি ভোটের প্রচারে যেতে না পারলেও ঈদশুভেচ্ছা বিনিময়ের আড়ালে ব্যানার, বিলবোর্ড, পোস্টার সেঁটে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহায় বেশির ভাগ নেতা নিজের এলাকায় ছিলেন। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের চাঙ্গা করতে এবং মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন আদায়ে স্বচেষ্ট প্রয়াস চালিয়েছেন। গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, কর্মীসভা, ব্যক্তিগত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং ফরিদপুর-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোদাররেস আলী ইছা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন আন্দোলনে আছি। তার মানে এই নয় যে, নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের নেই। দল যখনই সিদ্ধান্ত দেবে, তখনই আমরা নির্বাচনে যেতে পারব। আমাদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন