বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের একমাত্র ক্রাইসিস ম্যানেজার শেখ হাসিনা

July 11, 2023 | 5:25 pm

তাপস হালদার

বাংলাদেশের ওয়ান ডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের হঠাৎ পদত্যাগের খবরে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট, পরিচালকগণেরা সবাই তার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। গুজবের ডালপালা চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছেন কোচ হাতুরি সিংহে, আবার কেউ বা প্রেসিডেন্টের দ্বন্দ্বের কথা চাউর হচ্ছেছিল। আপামর জনসাধারণের আশা সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ তামিমকে দলে দেশের প্রয়োজনেই লাগবে। কিন্তু তামিমকে বোঝানোর দায়িত্বটা কে নেবে? জনগণের কথা, দেশের কথা চিন্তা করে এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। অথচ এই দায়িত্বটি কার ছিল? ক্রিকেট বোর্ডের, সর্বোপরি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম এগিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটার কারণ সবাই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল। তার মমতাময়ী জাদুকরী ছোঁয়ায় সবাই সব কিছু ভুলে যায়। তামিমও বাইরে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তো আমি না বলতে পারি না। শেখ হাসিনা শুধুমাত্র খেলাধুলা নয়, দেশের প্রতিটি সংকটে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এবং সংকট সমাধানে তিনি ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের প্রতিটি সংকটে দেবদূতের মতো আবির্ভূত হন শেখ হাসিনা। সংকট মোকাবিলায় প্রতিবারই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ২০০৯ সালে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় তার দেড় মাসের মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহে ঘটনা ঘটে। তখন সেনাবাহিনী ও সরকার প্রায় মুখোমুখি অবস্থায় চলে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সংকট মোকাবেলা করেন। একটি সংকটময় পরিস্থিতি থেকে জাতিকে উদ্ধার করেন। সেকথা আদালতও বলেছে। বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিদ্রোহ দমনে সময়োপযোগী ও সঠিক সিন্ধান্ত গ্রহণে শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহের ভয়াবহতা ও আকস্মিকতায় সদ্য নির্বাচিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম ধৈর্য্য, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার সাথে দৃঢ় মনোবল নিয়ে শক্ত হাতে বিদ্রোহ দমনের যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিন্ধান্ত ছিল দূরদর্শিতাপূর্ণ।

২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা শহর দখলের দ্বিবাস্বপ্ন দেখেছিল। তাদের রসদ জুগিয়ে ছিলো বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির আশকারা পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ঢাকার পল্টন ও মতিঝিলে ব্যাপক ধংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। সেদিন অনেক ভয় পেয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ক্ষমতা দখলের পরিবর্তে তারা লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। এরাই পরবর্তীতে ২০১৯-২০ সালে নতুন ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছিল। বাংলাদেশে যেহেতু ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ তাই তাদের যুক্তি এখানে ভাস্কর্য থাকবে। এমন কি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য রাজধানীর ধোলাইপাড় থেকে না সরালে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার হুমকি দেয়া হয়। এবং তারা বলতে থাকে সরকার যদি ভাস্কর্য স্থাপনের নামে মুর্তি তৈরির সিন্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে তৌহিদি জনতার আন্দোলন চলবে। তাদের দাবি ভাস্কর্য নাকি মুর্তি, তাই মসজিদের শহর ঢাকায় মুর্তি স্থাপন করা যাবেনা। অনেকেই তাদের সাথে আপোষ করতে দেখা গেছে, কিন্তু আপোষ করেন নি একজন, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার দৃঢ়চেতা সিন্ধান্তে ধর্ম ব্যবসায়ীরা পালাতে বাধ্য হয়েছে।

পদ্মাসেতু বাংলাদেশের গর্ব ও জাতির অহংকার। অথচ এই পদ্মাসেতু তৈরি সম্ভব হয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কারণে। কথিত দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মাসেতু থেকে বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রকল্প থেকে সরে আসে তখন অন্যান্য দাতা সংস্থা গুলোও সরে যায়। তখন পদ্মা সেতু নির্মান নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি। দেশের তথাকথিত অর্থনীতিবিদ কিংবা বুদ্ধিজীবীরা একবাক্যে বলেছিল বিদেশি অর্থায়ন ছাড়া এতবড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব না। তাদের সাথে সুর মিলালেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও। এমন সংকটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মান করবেন। অনেকেই এটিকে কথার কথা মনে করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু তৈরি করে প্রমান করলেন তিনি যেটা বলেন, সেটা করে দেখান। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি কতটুকু মজবুত সেটা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মান করে শেখ হাসিনা প্রমান করেছেন।

বিজ্ঞাপন

করোনা মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো আশংকা প্রকাশ করেছিল করোনায় বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মারা যাবে। শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে করোনা মোকাবেলায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক গবেষকদের আশংকাকে ভুল প্রমানিত করেছেন। যার কারণে ২০২০ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনে ‘লিডারশিপ স্ট্যাটেজি’ শিরোনামে করোনা মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কতিপয় বিশ্বনেতাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও একই ভাবে প্রশংসা করেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর সব দেশেই এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশেরও আমদানি-রপ্তানি খাত সহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডলার সংকট, রিজার্ভ কমতে শুরু করে, বিরোধীরা যখন শ্রীলঙ্কা হওযার দুঃস্বপ্নে বিভোর তখন প্রধানমন্ত্রীর জাদুকরী সিন্ধান্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কয়লা সংকটে যখন পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায় তখন ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের কবলে পড়ে দেশ। খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও বলেছিলেন একমাস এই সমস্যা থাকবে। কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যায় হাত দেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যুতের সমাধান হয়ে যায়। তিনি ভারতের আদানি থেকে বিদ্যুৎ এনে সংকট সমাধান করেন।

শেখ হাসিনা তার শাসনামলে অনেক অসাধ্য কাজ সম্পাদন করেছেন। যে পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় অশান্ত ছিল। বাংলাদেশের আইন সেখানে কার্যকর প্রায়ই অসম্ভব ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা তার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। যার কারণে সেখানে এখন শান্তি বিরাজ করছে। সেসময় কালে ভারতের সাথে করা হয়েছিল পঁচিশ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি। তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতা ছাড়া ভারত ও মায়ানমারের সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি ইতিহাসে বিরল। ১৯৬৫ সাল থেকে অমীমাংসিত ভারতের সাথে স্থল সীমানা চুক্তি সহ অনেক জটিল কাজ সমাধান করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। এজন্য দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। তার গৃহীত পদক্ষেপে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ উত্তরণ করেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শেখ হাসিনা গৃহীত উদ্যোগ গুলো হলো-একটি বাড়ি এতটি খাসার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বিদ্যুৎ, আশ্রায়ন প্রকল্প, পরিবেশ সুরক্ষা সহ আরো অনেক সামাজিক কর্মসূচি।

লেখাটা শুরু করেছিলাম তামিম ইকবালের অবসর নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের একটা ধারণা জন্মেছে যে সব কিছু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাধান করবেন। তাই তামিম ইকবালের অবসরের ঘোষণার পর সবাই-ই ভেবেছিলো প্রধানমন্ত্রী তাকে ডাকবেন এবং তামিম ইকবাল খেলায় ফিরে আসবেন। ঘটনাও তাই ঘটেছে। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, জনগণের ধারণা সমস্যা যাই হোক সমাধান করবেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের একমাত্র ক্রাইসিস ম্যানেজার।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য সম্প্রীতি বাংলাদেশ

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন