বিজ্ঞাপন

মা-বাবাসহ এবার হজে যেতে চেয়েছিলেন সাদিক

May 11, 2018 | 9:49 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাবা আসাদুজ্জামান ও মা শেলি বেগম এ বছর হজ্জ্বে যাবেন। ছেলে শিবলী সাদিককে কোথায় রেখে যাবেন ভেবে উপায় না পেয়ে ছেলেসহ সবাই মিলে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনও করেছিলেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকালে আশুলিয়া এলাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন সাদিক। সেখান থেকে লেগুনাতে করে দারুস সালাম টোলারবাগের বাসায় ফিরছিলেন। ফেরার পথে ঘটে দুর্ঘটনা।

খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন মামা এম এ হান্নান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে সাদিক। আর কোনো সন্তান নেই তাদের। বাবার বয়স ৬০ আর মায়ের বয়স ৫৩ বছর। এক সন্তানকে নিয়েই তাদের সব চিন্তা-চেতনা। ছেলেকে হারিয়ে বাবা মা দুজনই বাকরুদ্ধ। তারা ছেলের মরদেহ দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

সাদিকের বাবা

সাদিক এবার অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই) অনার্স পাস করেছেন। মাস্টার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সাদিকের বাবা আমজাদ হোসেন মিরপুরে একটি গার্মেন্টসের জেনারেল ম্যানেজার পদে কর্মরত আছেন। তার মা শেলি বেগম গৃহিনী। তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।

মামা বলেন, বাবা-মাসহ সাদিকের এবার হজ্জ্বে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সাদিক চলে গেল। অনেক চেষ্টার পর বাবা মায়ের কোলে এসেছিল সাদিক। এখন সেই কোল আবারও শূন্য হয়ে গেল।

মৃত্যুর খবর পেয়ে বন্ধ-বান্ধব ও সহপাঠীরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। তাদের অভিযোগ লেগুনাটি চালাচ্ছিল অপ্রাপ্ত বয়সের একটি ছেলে। হেলপারও বয়সে ছোট ছিল।

বিজ্ঞাপন

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে উপস্থিত শাহ আলী থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বেড়িবাঁধ সড়কে পাইপ বসানোর কাজ চলায় রাস্তা খোড়া হয়েছে। রাস্তার পাশে অনেকগুলো পাইপও রাখা হয়েছে। রাস্তার প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, আশুলিয়া থেকে মিরপুরের দিকে যাচ্ছিল লেগুনা এবং আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছিল মোহনা পরিবহনের বাসটি। গড়ান চটবাড়ী এলাকায় গিয়ে দুটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে অন্তত ৮ জন আহত হন। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তিন জনকে মৃত ঘোষণা করে। বাকী পাঁচজনের দুইজনকে রেখে তিন জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এসআই আরও বলেন, বাস ও লেগুনা জব্দ করা হলেও চালক ও হেলপার কাউকেই আটক করা যায়নি। তবে তাদের আটক করার চেষ্টা চলছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই সিরাজ বলেন, লেগুনার চালক ও হেলপার যারা তারা সবাই শিশু বলা চলে। এদের ধরে আনলেও আইনের ফাঁক দিয়ে পার পেয়ে যায়। তাদের কোনো লাইসেন্সও নেই। তবে যেই হোক তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিজ্ঞাপন

লেগুনার আরেক যাত্রী মৃত ইয়াসিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। তার বাসা মিরপুর বাংলা কলেজের পেছনে। তার বাবা আসাদুজ্জামান ব্যবসা করেন।  তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন বন্ধ বান্ধব আত্মীয় স্বজনসহ অনেকেই।

বন্ধু আমান বলেন, ইয়াসিন এবার মানারাত থেকে পঞ্চম পর্বের পরীক্ষা শেষ করেছে। বৃত্তি নিয়ে এবার তার জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘাতক বাস প্রাণ কেড়ে নিলো।

লেগুনায় ছিলেন আরেক কন্যা শিশু। যা সেও এই দুর্ঘটনায় মারা গেছে। পরিচয় এখনও মেলেনি তার। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে তার মরদেহ। আর সাদিক ও ইয়াসীনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন