বিজ্ঞাপন

‘আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য’

May 12, 2018 | 3:56 am

।সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ থেকে আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম।’ শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টা ১৪ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড-৩৯ থেকে বাংলাদেশের এই স্বপ্ন মহাকাশপানে যাত্রা শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যে স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটের ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রিয় দেশবাসী এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে যারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ কার্যক্রম দেখছেন তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং বাঙ্গালি জাতির জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের দিন। বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রার ধারবাহিকতায় আজকে যোগ হচ্ছে আরও একটি মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছি। ‘

বিজ্ঞাপন

গৌরবের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, ‘তিনি ২৪ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং জেল-জুলুম-নির্যাতন অগ্রাহ্য করে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ এবং নির্যাতিত মা-বোনকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বহির্বিশ্বের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারলে অগ্রগতি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে রাঙ্গমাটির বেতবুনিয়ায় প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন। যার সাহায্যে তথ্য-উপাত্ত আদান প্রদানের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়।’

বিজ্ঞাপন

‘আজ আমরা জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি নিজস্ব উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে। তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে আজ যুক্ত হতে যাচ্ছে স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ। আজ থেকে আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম। প্রবেশ করলাম এক নতুন যুগে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, এই স্যাটেলাইট দিয়ে বাংলাদেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কাজাকিস্থান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের অংশ বিশেষে বিভিন্ন রকম সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।  বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগবিভাগসহ নির্মাতা ও উৎক্ষেপণ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ সময় স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ এর উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ সবার দোয়া চান।

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টা ১৪ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড-৩৯ থেকে মহাকাশপানে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের এই স্বপ্ন। এর আগে রাতে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে প্রস্তুতি শুরু হওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৩টা ৪৭ মিনিটে বঙ্গবন্ধু-১ এর যাত্রা বাতিলের পর স্পেসএক্স জানিয়েছিল শেষ মুহূর্তে গ্রাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়ায় উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়। ওড়ানের জন্য রাখা রিজার্ভ ডে আজ শুক্রবার একই সময়ে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ আবারও উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মহাকাশে পাড়ি জমানোর কথা ছিল। পরে সেই সময় বাড়িয়ে ৩টা ৪৭ মিনিটে নির্ধারণ করা হয়। পরে সময় আরও ১৫ মিনিট বাড়িয়ে ৪টা ২ মিনিটে উৎক্ষেপণের কথা বলা হয়। সবশেষে ৪টা ৭ মিনিটে উৎক্ষেপণের স্থগিতের কথা জানায় স্পেসএক্স।

স্পেসএক্স ওয়েবসাইটে আরো জানিয়েছে এর উৎক্ষেপণযান বা রকেট ফ্যালকন-৯ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে মহাকাশে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত অরবিট প্লটে স্থাপন করবে।

বিশেষ এই ক্ষণের স্বাক্ষী হতে গতকালের মতো ইউটিউবে, টেলিভিশনের পর্দায় চোখ ছিল বিশ্বজুড়ে বাঙালির। এ যেন স্যাটেলাইটের মহাকাশযাত্রা নয়, বাঙালির মহাকাশযাত্রা। অনেকে আবার নিজের এলাকায় টাঙানো বড় পর্দায় প্রত্যক্ষ্য করেন বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’কৃত্তিম উপগ্রহের মহাকাশের পথে রওনা হওয়ার মূহুর্তটি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।

 

সারাবাংলা/ ইএইচটি/ এসবি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন