বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গুতে মা-বাবা হারাল মেয়ে, সন্তান হারাল মা

July 18, 2023 | 6:15 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১০ মাসের শিশু রাজশ্রী ধর। মাস তিনেক আগে ঘটা করে মুখে ভাত দেওয়া হয়। সর্বনাশা ডেঙ্গু আদরের ধনটিকে কেড়ে নিয়েছে তার মা-বাবার বুক থেকে। আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চন্দনাইশে মারা গেছেন তিন সন্তানের মা এলিনা হক। মা-হারা সন্তানগুলোর চোখে এখন অন্ধকার।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এ দু’জনের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২০ জনে।

রাজশ্রী ধর চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাট গ্রামের বাসিন্দা রাজীব ধরের মেয়ে। রাজীব পেশায় স্বর্ণকার। তার সাত বছরের এক ছেলে আছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামেই থাকেন।

রাজীব ধর সারাবাংলাকে জানান, গত ১২ জুলাই রাজশ্রীর হালকা জ্বর আসে। এর আগ থেকে অবশ্য আমাশয় হয়েছিল। ডাক্তার দেখানোর পর জ্বর কিছুটা কমে এলেও পায়খানার সাথে রক্ত যেতে শুরু করে। শুক্রবার রাতে জ্বর-খিঁচুনি শুরু হলে শনিবার সকালে তাকে এনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই পরীক্ষায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করেন চিকিৎসক। গত (সোমবার) রাতে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

তার ধারণা, ঈদুল আযহার সময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আত্মীয়ের বাসায় এসে চারদিনের মতো ছিলেন। তখনই মশার কামড়ে তার মেয়ের ডেঙ্গু হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজীব সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক ছেলে, একে মেয়ে নিয়ে আমার সুখের সংসার ছিল। তিন-চার মাস আগে বড় অনুষ্ঠান করে মেয়ের মুখে ভাত দিই। ভগবান আমার মেয়েটাকে এভাবে কেড়ে নেবে ভাবতে পারিনি। কেন যে শহরে বেড়াতে গেলাম! সেখানে গিয়ে আমার কপাল পুড়েছে। যদি জানতাম, ডেঙ্গু এত ভয়াবহ হয়েছে, কখনোই যেতাম না।’

মৃত এলিনা হক (৩৫) চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের দক্ষিণ জোয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত (সোমবার) রাতে তার মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এলিনা হকের ভাই নাহিদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিন-চারদিন ধরে জ্বর ছিল। প্রথমে চন্দনাইশে ক্লিনিকে ভর্তি করি। সেখানে গতকাল (সোমবার) সকাল থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। আমরা দ্রুত চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। শুরুতেই আইসিইউতে দেওয়া হয়। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। আমার দুলাভাই শহরে ছোটখাট চাকরি করেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তিনজনই ছোট। হঠাৎ মা চলে গেল। তাদের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছে।’

চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২০ জনের মধ্যে নয় শিশু, এক কিশোর, ছয় পুরুষ এবং চার জন নারী আছেন।

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ২০ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১ জন এবং চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ জনসহ মোট ৬৬ জন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ৩৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

চলতি বছরের শুরু থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ১ হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসের ১৮ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৭ জন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুনে ২৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২৩০ জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন