বিজ্ঞাপন

সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও ভয়ংকর হবে: রিজভী

August 7, 2023 | 6:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও ভয়ংকর ও বিপজ্জনক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রহুল কবির রিজভী।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তাদের হাত দিয়ে ভাল কিছু হবে বলে আমি মনে করি না। দেশি-বিদেশি চাপে তারা আইওয়াশ হিসেবে এটি করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও ভয়াবহ ও বিপজ্জনক হবে।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আওয়ামী ফ্যাসিজমের কালো ছায়ার নিচে। নির্যাতন-নির্মমতার মুখে দাঁড়িয়ে আছে গণতন্ত্রকামী মানুষ। অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী জনগণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আজ স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও দেশকে গণতন্ত্রের অভিমুখী না করে নিষ্ঠুর ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠা করার আয়োজন চলছে। জুলুমবাজ সরকারের বিষাক্ত থাবা পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী বিদ্বেষের মন্ত্রণাদাতা।’

বিজ্ঞাপন

রিজভী বলেন, ‘বিগত কয়েকদিনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয়েছে এক সর্বগ্রাসী সহিংসতা। আইনের শাসন, সুবিচার, মানবিক মর্যাদার অস্তিত্ব মুছে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্র এখন মৃত। সে জন্যই গণতন্ত্রে স্বীকৃত বিরোধী দলের যে কোনো কর্মসূচিকে বরদাস্ত করছে না সরকার। মিছিলের শব্দ শুনলেই গুলি চালানো হচ্ছে নির্বিচারে, সাপ পেটানোর মতো লাঠিপেটা করা হচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিরোধী নেতা-কর্মীদের হাত, পা, পিঠ, পাকস্থলীই শুধু বিদ্ধ হচ্ছে না, তাদের মহামূল্যবান অঙ্গ চোখ হারিয়ে চির দিনের জন্য অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে, চেনা পৃথিবী হয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে অচেনা। আজীবন পরিবারের নিকট বোঝা হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এ বেদনা সহ্য করার মতো নয়। তাদেরকে সহমর্মিতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না।’

রিজভী বলেন, ‘বর্তমানে মত প্রকাশের ওপর বিধি-নিষেধ রয়েছে। কেউ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে গেলে তার ঠাঁই হয় কারাগারে বা আয়নাঘরে। এখন রাজনৈতিক দলের সমাবেশের অধিকার পুলিশের ইচ্ছা—অনিচ্ছার ওপর। সুষ্ঠু নির্বাচনে নিজের পছন্দের দলকে ক্ষমতায় আনার অধিকার ভোটাররা হারিয়েছে। প্রতিনিয়ত সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য একটি তাবেদার তথ্য—ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অতি যত্নে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অপপ্রচার আর কুৎসা ছড়ানোর জন্য গণমাধ্যমের কিছু অংশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনকে রোধ করার জন্য জুলুমের সর্বোচ্চ পন্থা নামিয়ে এনেছে সরকার। গণতন্ত্রের উল্টো যাত্রাকেই অব্যাহত রাখতে চায় তারা।’

রিজভী বলেন, ‘কোনোভাবেই যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হতে না পারে সেজন্য সরকার দমন-পীড়নে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছে। মুদ্রা পাচার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোপাট, শাসকগোষ্ঠীর আত্মীয়স্বজনদেরকে হরিলুট করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের সীমাহীন আবর্তের মধ্যে দেশকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই অনাচারমূলক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য তাদের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা প্রয়োজন। তাই তারা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুম, খুন, ক্রসফায়ারের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবেই এই আতঙ্কের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যাতে গণতন্ত্রকামী মানুষ রাজপথে ধেয়ে আসতে না পারে। বিএনপি ও ভিন্ন মতের মানুষদের পাইকারী হারে গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, কখনও বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বিগত দেড় দশক ধরে।’

রিজভী বলেন, ‘২৮ ও ২৯ জুলাইয়ের পূর্বাপর চলছে জুলুম, উৎপীড়নের নানামুখী তৎপরতা। গ্রেফতার, গুম কোনোভাবেই থামছে না। গভীর রাতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গোয়েন্দা পুলিশ হানা দিচ্ছে। বিশেষ বিশেষ টিম গঠন করে চালানো হচ্ছে অভিযান। টার্গেট করা নেতা-কর্মীদের না পেলে পরিবারের সদস্যদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা আতঙ্কে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। র‌্যাবের মতো গোয়েন্দা পুলিশও এখন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় অনুগত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আজ আদালতে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক সরকারসহ ২৭ জন নেতা-কর্মীকে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আমরা আগেই বলেছি, সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। ইসাহাক সরকারসহ ২৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আজ সাজা দেওয়ার ঘটনা আরেকটি ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত।’

রিজভী জানান- ২৮ ও ২৯ জুলাই মহাসমাবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আহত হয়েছে প্রায় ৮২০ জন এবং গ্রেফতার প্রায় ৫০০ জন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম,যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম,নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন