বিজ্ঞাপন

সেই দুদক কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি

August 10, 2023 | 9:43 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অভ্যন্তরীণ তদন্তে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মুহ. মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দুদক পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয় বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

কমিশন সূত্রে জানা যায়, তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিমের অপর সদস্যরা হলেন- দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক নেয়ামুল গাজী।

মাহবুবুল আলম দুদকে ২৮ বছর আগে পরিদর্শক পদে যোগ দেন। এর পর পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন উপ-পরিচালক। তিনি বর্তমানে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২ এ কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত দুর্নীতিবাজদের অব্যাহতি দেওয়ার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মাহবুবুল আলম দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, অনৈতিকভাবে অর্জিত অর্থে নিজ নামে, স্ত্রী, মেয়ে ছাড়াও নিকটাত্মীয়র নামে রাজধানীর শান্তিনগর ও রামপুরায় বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট, দোকান, গাড়ি, বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ, বরগুনার আমতলী উপজেলায় তার গ্রামে কয়েকশ বিঘা জমিসহ অঢেল সম্পত্তি গড়ার অভিযোগ রয়েছে। এ সব অভিযোগের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান চালায় দুদক। তিন বছর অনুসন্ধান শেষে বেশকিছু অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করছে দুদক। ফলে কমিশন থেকে আরও অধিকতর তদন্তের জন্য এবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করল।

দুদকে অভিযোগ পড়ার পর তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও অভিযোগ জমা পড়ে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অভিযোগের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র দুদকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিতকরণের অনুরোধ জানানো হয়। পরে ওই অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে একই ধরনের আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। তিন বছর অনুসন্ধান শেষে গত ২৪ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি।

আরও পড়ুন: দুর্নীতির ‘রাঘব বোয়াল’ যখন দুদক কর্মকর্তা!

বিজ্ঞাপন

দুদকের অভ্যন্তরীণ সেই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহবুবুল আলমের নামে দান ও কেনাসূত্রে ১৮টি দলিলে ৪৫৫ শতক জমি এবং ২০ লাখ ১ হাজার ৩০০ টাকা বিনিয়োগসহ ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯১ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালীর গলাচিপা আড়তপট্টিতে ছয়টি দোকান কিনেছেন তিনি। গ্রামে এক কোটি ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা মূল্যের কৃষি জমি রয়েছে তার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাহবুবুল আলমের স্ত্রীর নামে ১৪টি দলিলে ৩৫৪ শতক জমি কেনার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটি কোম্পানিতে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। তার মেয়ের নামেও সাতটি দলিলে ১৪৫ দশমিক ৮৮ শতক জমি, ২৬ লাখ টাকার গাড়ি কেনা ছাড়াও পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগসহ অন্যান্য সম্পত্তি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে দুদকে জমা পড়া এক অভিযোগে বলা হয়েছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় তার জমি ও তিন তলা একটি ভবন রয়েছে। এছাড়া বরগুনার আমতলীর সোনাখালী গ্রামে তার বসতবাড়িতে দুই তলা ভবন, পটুয়াখালীর পায়রাবন্দরের পাশে কলাপাড়ায় কয়েকশ বিঘা জমি, আমতলী উপজেলায় কয়েকশ বিঘা ধানী জমি ও তিনটি দীঘি, ঢাকার শান্তিনগরে তার টাকায় ভাগ্নি জামাই হাবিবুর রহমানের নামে সাত তলা এবং রামপুরায় ছয় তলা ভবন রয়েছে।

অন্যদিকে, নয়াপল্টন এলাকায় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী নামে ২০ তলা মার্কেটে ভাগ্নি জামাই হাবিবুর রহমানের নামে শেয়ার, আমতলী উপজেলায় বাড়ি, হাবিবুর ও তার ছেলের নামে নতুন-পুরাতন গাড়ির শো-রুম, মিরপুরে দীপ্তি আবাসন প্রকল্পের নিকট আত্মীয়ের নামে শেয়ার, সেখানে মালিক দেখানো হয়েছে ফারুক মৃধা, নজরুল ও মশিউরসহ আরও কয়েকজনকে। এ ছাড়া বোন, বোন-জামাই, ভাগ্নে-ভাগ্নিদের নামে, শ্যালক ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নামেও ঢাকা ও পাবনায় শত শত বিঘা জমি কিনেছেন। বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে তার।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, তার নিজ উপজেলা আমতলীর একটি স্কুল ও কলেজে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদ নিয়েও তিনি আইন-বহির্ভূত প্রভাব খাটাচ্ছেন।

এদিকে, মাহবুবের দুর্নীতি নিয়ে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল সারাবাংলা একটি প্রতিবেদন করে। সেখানে তার দুর্নীতির আরও নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই সময় দাম্ভিকতাও প্রকাশ করেন মাহবুব।

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন