বিজ্ঞাপন

ফেনীর যানজটে ভোগান্তি ছড়িয়েছে ৫ জেলায়

May 13, 2018 | 5:12 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ফেনী: দু’পাশে যানবাহনের সারি নিয়ে থমকে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের ২৭ কিলোমিটার। এতে সৃষ্ট ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। গত কয়েকদিনে এই যানজট আর ফেনীতেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের আরো চার জেলায়। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নেয়াখালী ও লক্ষীপুরের ১৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক এখন ভুগছে এই যানজটের তীব্রতায়।

যানজটের এই ভয়াবহতায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই পাঁচ জেলাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করা সব জেলার মানুষ। পাশাপাশি এসব জেলা থেকে দেশের অন্যান্য অংশে পণ্য পরিবহনের সব শিডিউলই ভেঙে পড়েছে। পচনশীল খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তাতেই।

হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশকেও। অচল হয়ে পড়েছে ফেনী শহর। অনেক আগে ভেঙে গেছে পুরাতন মহাসড়কটিও। ভেঙে গেছে কাঁচা-পাকা সড়ক। জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও তাই এখন যানজট সার্বক্ষণিক সঙ্গী। বিশেষ করে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর, পাঁছগাছিয়া, শর্শদী, কাজিরবাগ, লেমুয়া, বালিগাঁও, ফরহাদ নগরসহ প্রায় ১৫টি ইউনিয়ন যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ, চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী ফতেহপুরে রেলওয়ের ওভারপাসের নির্মাণকাজের কারণে গত চার দিন ধরেই লেগে রয়েছে যানজট। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গতকাল রোববারও সকাল থেকেই চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কের চারটি লেনে হাজার হাজার যানবাহন আটকে পড়ে ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট এড়াতে কিছু যানবাহন কুমিল্লা হয়ে লাকসাম-সোনাইমুড়ি-চৌমুহনী হয়ে চলতে শুরু করে। পরে সেই সড়কেও যানজট ছড়িয়ে পড়েছে।

স্টার লাইন পরিবহনের যাত্রী হাজী আবদুর রহমান জানান, তাদের বাসটি যানজট এড়াতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কুমিল্লা শহরের পদুয়ার বাজার থেকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ফেনী পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা কিছু বাস সকালে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে ছাগলনাইয়া ঘুরে ফেনী পর্যন্ত পৌঁছায়। এরপর আর মুক্তি মেলেনি। দুপুরে এইসব গাড়ি মিরসরাই পর্যন্ত আসতে পারেনি। তার আগেই যানজটের কবলে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

দেশ পরিবহনের যাত্রী মেহেদীর সঙ্গে কথা হয় রোববার দুপুর ৩টায়। তিনি বলেন, সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছি। এখন মিরসরাইয়ে আছি। জানি না, ঢাকায় কখন পৌঁছাতে পারব। বাসে থাকা নারী-শিশুদের অনেক বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যাত্রীরা বলছেন, শিশু ও নারীদের অবস্থা শোচনীয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। যারা শারীরিকভাবে একটু দুর্বল, তাদের দুর্ভোগ ছাড়িয়েছে সব মাত্রা। পাশাপাশি রাতে নিরাপত্তার শঙ্কাতেও ভুগছেন তাার।

এদিকে, পণ্য পরিবহনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে এই যানজট। চট্টগ্রাম ও আশাপাশের জেলা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অংশে পণ্য নিয়ে রওনা হওয়া ট্রাক সময়মতো পৌঁছাতে পারছে না কোথাও। এতে করে পচনশীল পণ্য ও কাঁচামালগুলো নষ্ট হচ্ছে রাস্তাতেই। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

 

বিজ্ঞাপন

ফেনী জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম নবী সারাবাংলাকে বলেন, ওভারপাসের নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই চলাচলের জন্য যে অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে যানবাহনের চাপ বিবেচনা করা হয়নি। যেখানে চার লেনের অ্যাপ্রোচ রোড দরকার, সেখানে দুই লেনের কোনো রকম অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করা হয়েছে। তাও আবার একমুখী চলাচল করানো হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না গাড়ি। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

ফতেহপুর রেলওভারপাসের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল আমিন কনস্ট্রাকশানের প্রজেক্ট ম্যানেজার মীর্জা মহিউদ্দিন জানান, যানজট নিরসনে মহাসড়কের এ অংশে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিপু বিপিএল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উড়াল সেতুর (ওভারপাস) নির্মাণ কাজ শুরু করে। কার্যাদেশ পওয়ার তিন বছরে ২০% শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি তারা। এক পর্যায়ে ওই ঠিকাদার কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সহায়তায় আল আমিন কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৬০ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আগামী ১৫ মে এটি চালু করার কথা রয়েছে। এটি চালু হলে ভোগান্তি দূর হবে বলে আশা করছেন মহিউদ্দিন।

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যানজট নিরসন, জনভোগান্তি দূর ও রাস্তা সংস্কারের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক-পরিবহন ইউনিয়ন। কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো যান চলাচল করবে না। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরদিন দুপুর ১২টা থেকে তিন ঘণ্টার জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

মহাসড়কে যাত্রীদের টানা এই দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন গত দু’দিন মহাসড়কের ফেনী অংশে চালক ও যাত্রীদের মাঝে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করেছে। ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, মানবিক বিবেচনায় যাত্রীদের মধ্যে পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করছি আমরা।

যানজট নিরসনে পুলিশ তৎপর জানিয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের ছয়টি টিম, গোয়েন্দা পুলিশের দু’টি টিম ও ডিএসবি পুলিশের একটি টিম দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই মহাসড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সারাবাংলা/আইএ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন