বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিয়ে জরুরি সভা, প্রকল্প পরিচালক ঢাকায়

August 13, 2023 | 9:00 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ চললেও অতি ভারি বর্ষণে সৃষ্ট পাঁচদিনের জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত ছিল চট্টগ্রাম নগরী। এর কারণ অনুসন্ধান, প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে জরুরি সভায় বসেছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। কিন্তু সেই সভায় আসেননি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের পরিচালক ও উপ প্রকল্প পরিচালক।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে সভায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সভায় তাদের অসহযোগিতার কথা জানিয়ে মন্ত্রীপরিষদ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ১৬টি খালের মাটি উত্তোলনের কাজ শেষ করলেও খালগুলো বুঝে নিতে আপত্তি জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। জলাবদ্ধতা নিয়ে সিডিএ ও চসিকের গত কয়েকদিনের ‘পাল্টাপাল্টির’ পর সমন্বয়হীনতার চিত্র আরও দৃশ্যমান হয়েছে এই জরুরি সভায়।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা আয়োজন করেছিল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। শেষ পর্যন্ত সিডিএ’র কোনো প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছাড়াই সভা শেষ হয়েছে।

গত ৩ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে পাঁচদিন পানিবন্দি ছিল চট্টগ্রাম নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা। ব্যাপক জনভোগান্তির মধ্যে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিকের কিছুই করার নেই জানিয়ে সিডিএকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। অন্যদিকে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ নিয়োগ পাওয়া সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিস্কার না করার অভিযোগ আনেন।

এ নিয়ে পাল্টাপাল্টির মধ্যে রোববারের জরুরি সভায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার মইনুল হোসেন চৌধুরী কার্যপত্র উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের ৮৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের ৫৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিডিএর কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কের ৬৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সভায় সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী। তিনি প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের মধ্যে ১৬টি খালের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে জানিয়ে খালগুলো হস্তান্তরের প্রস্তাব তুলেন তিনি। এসময় বিভাগীয় কমিশনারের প্রশ্নের জবাবে শাহ আলী বলেন, ‘আমরা সিডিএকে খালগুলো হস্তান্তর করবো। সিডিএ চুক্তির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করবে।’

তখন বিভাগীয় কমিশনার সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য জানতে চান। সভায় তিনি আসেননি বলে জানানো হয়। উপ-প্রকল্প পরিচালকও আসেননি বলার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকতে পারবেন না শুনে তারিখ পিছিয়ে আজকে সভা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন তারা নেই কেন?’

সভা উপস্থিত একজন জানান, প্রকল্প পরিচালক মন্ত্রণালয়ে গেছেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘চট্টগ্রাম বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এটি এখানকার বড় সমস্যা। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হচ্ছে। সারা বাংলাদেশ এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। জনগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সবাই জানতে চাচ্ছেন। রেসপনসিবিলিটি, অ্যাকাউনটিবিলিটি না থাকে তাহলেতো তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

‘এটাতো তার টাকা না। আমার টাকা আমি খেয়ে ফেললাম, কাজ করলাম না। জনগণের টাকা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সেই জবাবদিহিতার জন্য আমরা বিভিন্ন কাজ রেখে এখানে এসেছি। সে নাই কেন ? ঢাকার চেয়ে এটা কি কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ? কাজ হচ্ছে এখানে, পিডি থাকবে ঢাকায় ? প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কাজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, পিডি ঢাকায় থাকতে পারবে না। যেখানে কাজ হবে সেখানে থাকবে। গত মিটিংয়ে না হয় গেল ঢাকায়। আজকেও ঢাকায়। তাহলে আমরা কার কাছ থেকে এটার বাস্তব অবস্থাটা জানবো।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তার এ আচরণকে ‘দায়িত্ব কর্তব্য এবং সরকারি আদেশের বরখেলাপ’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক সভায় আসেননি। গত ২৩ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও গত ৪ আগস্ট তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সভায়ও তিনি আসেননি। এটি সম্পূর্ণ তার খামখেয়ালিপনা। সভার কার্য বিবরণীতে এই অবহেলা এবং তার কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য মন্ত্রীপরিষদ এবং মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দীন এবং উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজী কাদের নেওয়াজ দায়িত্ব পালন করছেন।

কাজ শেষ হওয়া ১৬টি খাল বুঝে নেয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সভায় জানান, প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন (পিসিআর) পাওয়ার আগে খাল বুঝে নিলে আইনী জটিলতা তৈরি হবে।

সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন,‘সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভাগুলোতে সিডিএর প্রতিনিধি আসেন না। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তাছাড়া যেসব খালগুলোর কাজ শেষ করা হয়েছে বলা হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে মেয়র মহোদয় সন্তুষ্ট নন। কাউন্সিলররাও অসন্তোষ জানিয়েছেন। উনাদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রকল্পে যে পরিমাণ মাটি উত্তোলনের কথা ছিল তা করা হয়নি। তাই অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় খাল বুঝে নিলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।’

বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়। সভায় মন্ত্রী পরিষদকে অবহিত করে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় উত্থাপণের জন্য চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া সভায় খালগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আউটার রিং রোডের কারণে বেড়েছে জলাবদ্ধতা:

এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে সিডিএ’র নির্মিত আউটার রিং রোডের কারণে জলাবদ্ধতা বেড়েছে বলে সভায় বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতার একটা কারণ, এয়ারপোর্ট থেকে আউটার রিং রোড দিয়ে আগে সেখানে ১৫-১৬টি পানি যাবার রাস্তা ছিল। এখন আউটার রিং রোড হবার পর ৫-৬টা হয়ে গেছে। সাতকানিয়ায় যে জলাবদ্ধতা সেটার জন্য একটা আলোচনা হচ্ছে যে, রেললাইনের বিষয়। একই কারণ চট্টগ্রাম শহরের জন্য রিং রোড বলে মনে করি। জানি না এটা কিভাবে ম্যানেজ হবে।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে চসিকের নিয়মিত অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এনফোর্সমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য। সিটি করপোরেশনে দুটি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের পদ আছে। পাঁচমাস ধরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নেই। মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি, তদবির করেছি কিন্তু পাচ্ছি না।’

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন