বিজ্ঞাপন

মেয়াদ শেষের আগেই ৯ ছাত্রলীগ কর্মীকে চবি কর্তৃপক্ষের ক্ষমা

August 14, 2023 | 7:02 pm

চবি করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কৃত নয় শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। ‘অনেকটা গোপনেই’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই কাজ সম্পন্ন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, নয় শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ঘটনাটিকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে তুমুল সমালোচনা। তারা বলছেন, এভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের আরও উচ্ছৃঙ্খল হতে উসকে দেওয়া হয়েছে।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানাজানির পর রোববার (১৩ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর ড. নূরুল আজিম শিকদার এর সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান, গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বর্তমানে বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার বিষয়ে নূরুল আজিম শিকদার বলেন, ‘তারা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির মতামতের ভিত্তিতে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগস্টের শুরুতে তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ তবে কোন নয় শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে তা খোলাসা করেননি প্রক্টর।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, নয় শিক্ষার্থীকে যখন বহিষ্কার করা হয়েছিল তখন প্রক্টর হিসেবে বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন রবিউল ইসলাম ভূঁইয়া। গত ১২ মার্চ তিনি প্রক্টর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। নয় শিক্ষার্থীর বিষয়ে পূর্বতন কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্ত তাদের অজ্ঞাতসারে বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘অসম্মানজনক’ বলছেন শিক্ষকদের একাংশ।

সূত্র জানায়, যাদের ক্ষমা করা হয়েছে তারা ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মী। তারা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াসের অনুসারী। অভিযোগ আছে, বহিষ্কারের পরও তারা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং হলেও অবস্থান করেছে। বিষয়টি জানার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।

জানা গেছে, অতীতে মেয়াদ শেষের আগে বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থী নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন, এমন দৃষ্টান্ত আছে। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে সাত জনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। আর সেই সাত জনের মধ্যে একজন ছিলেন আইন বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খালেদ মাসুদ। তিনি গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও একটি অনলাইন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধরের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

চবির ইতিহাসে এমন আরও অনেক নজির আছে যারা ক্ষমা পেয়েও সংশোধন হননি, বরং অপরাধের মাত্রা বাড়িয়েছেন।

২০২২ সালে ১৭ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার

গত বছরের ১১ আগস্ট ছাত্রীদের আবাসিক হল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের চার নেত্রীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের উপ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক তাসফিয়া জাসারাতকে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের এক নেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আরশিল আজিম এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শোয়েব মোহাম্মদ (আতিক)।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের কক্ষ ভাংচুর ও প্রাধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলাম।

গত বছরের ২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও রাম দা উঁচিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয় ছাত্রলীগকর্মীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তনয় কান্তি শিকদার, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ লাবিব সাঈদ, ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সিফাতুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাহিদুল ইসলাম, একই বর্ষের ইতিহাস বিভাগের মো. মোবারক হোসেন।

এ ছাড়া ২৪ আগস্ট শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আটক হওয়া ছাত্র অধিকারের কর্মীক দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। ওই কর্মীর নাম জোবায়ের হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সর্বশেষ গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি পরপর দুদিন রাতে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল শাখা ছাত্রলীগের দুটি উপপক্ষ। এতে উভয়পক্ষের ১১ জন আহত হন। আহত হয়েছিলেন সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম। ওই দুই দিনের ঘটনায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তাঁরা হলেন, ফিন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের আমিরুল হক চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের ইকরামুল হক ও দর্শন বিভাগের একই বর্ষের নয়ন দেবনাথ। বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহমুদুল হাসান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোহাম্মদ ফাহিম।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি সাংবাদিক হেনস্তা, ছাত্রী হলে মারধরসহ পৃথক ছয় ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃতদের ১৭ জন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তবে এদের মধ্য থেকে শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নয় শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সারাবাংলা/এমএ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন