বিজ্ঞাপন

বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠাক— ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

August 29, 2023 | 4:48 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার স্থগিত চেয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ১৬০ বিশ্বনেতার বিবৃতির সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে ড. ইউনূসের মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, একজন ব্যক্তির পক্ষে এত এত বিবৃতি দেওয়ার কী আছে? তারা এখানে বিশেষজ্ঞ পাঠাক। তারা এসে দেখুক সবকিছু ঠিক আছে কি না। তারা দেখুক কোথাও কোনো অনিয়ম আছে কি না।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার খুব অবাক লাগছে যে, ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকত যে তিনি কোনো অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।’

বিজ্ঞাপন

‘আমাদের দেশের বিচারবিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছু আইনমতো চলে। কেউ যদি এখন ট্যাক্স না দেয়, যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, আর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়, লেবার কোর্টে যদি মামলা হয়, সেখানে আমাদের কী হাত আছে, যে আমরা মামলা বন্ধ করে দেব?’

‘একটা চলমান মামলা, আমাদের দেশে তো আমরা চলমান মামলা নিয়ে আলোচনাও করি না, কারণ এটা সাব-জুডিস। যেখানে সাবজুডিস হিসেবে নিজের দেশেই গণ্য করা হয় সেখানে মামলা প্রত্যাহার করার আমি কে? এখানে আমার কোন অধিকারটা আছে আপনারাই বলেন। সেই ক্ষমতাটা দিয়েছেন আমাকে? জুডিশিয়ারি তো সম্পূর্ণ স্বাধীন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা দেশ যখন চলে, সেখানে জুডিশিয়ারি, লেজিসলেটিভ এবং এক্সিকিউটিভ- এই তিনটি অঙ্গ একসঙ্গে চলে। একটার ওপর তো হস্তক্ষেপ আমরা করতে পারি না। যারা এই বিবৃতি দিয়েছেন তাদেরকে আমি আহ্বান করি, তারা এক্সপার্ট পাঠাক, তাদের যদি এতই দরদ থাকে, তারা ল-ইয়ার পাঠাক এবং যার বিরুদ্ধে মামলা তার সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক, তারাই এসে দেখুক সেখানে কোন অন্যায় আছে কি না?’

বিজ্ঞাপন

‘তারা নিজেরা এসে দেখুক, তারা বিবৃতি দিয়ে কী করে একটা মামলা তুলে নেবে আমি তো জানি না! তাদের এসে দেখা দরকার যে, এখানে কী কী অসামঞ্জস্যতা আছে? লেবার ল, লেবারের অধিকার নিয়ে তো আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়। আমাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইএলও’তে শুধু নালিশ আর নালিশ। অথচ যারা লেবারের অর্থ…, এ দেশের কোম্পানি আইনে আছে, প্রফিটের ৫ শতাংশ লেবার ওয়েলফেয়ারে দিতে হবে। এখন যদি কেউ সেটি না দেয় বা লেবাররা যদি মামলা করে, মামলা করার ফলে তাদের যদি স্যাক করা হয়, সেজন্য যদি তারা আবার মামলা করে, সেই দায়িত্ব তো আমাদের না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই মামলা যেন না হয়, তার জন্য ঘুষ দেওয়া, সেই ঘুষের টাকা পর্যন্ত ধরা পড়েছে। নেতারা যে টাকা খেয়েছে, সেই টাকাও ব্যাংকে ফ্রিজ করা। যারা এখন বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের আমি আহ্বান জানাই, ওখানে বসে বিবৃতি না দিয়ে এক্সপার্ট পাঠাক, তাদের ক্লায়েন্টের জন্য ল’ইয়ার পাঠাক, তারপর তারা এসে দলিল-দস্তাবেজ, কাগজপত্র সবকিছু ঘেঁটে দেখুক। সেখানে কোনো অন্যায় আছে, না কোনো অন্যায়ভাবে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।’

‘মামলা তো আমরা করিনি। ট্যাক্স ফাঁকি, সেই ট্যাক্স ফাঁকিতে যদি কেউ ধরা পড়ে, তাকে তো ট্যাক্স ফেরত দিতে হবে। তিনি তো কিছু যথাযথভাবে ফেরত দিচ্ছেনও’, বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এনবিআর থেকে বলছে যে, ৫ হাজার কোটি টাকাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়ে আছে। স্বাভাবিক এখন সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক একটা চাপ, যেখানে যেখানে সরকারের অর্থ পাওনা, সেখান থেকে তো অর্থ আদায় করতেই হবে। এনবিআর যদি সেই অর্থ, যারা ট্যাক্স দেয়নি বা আদালতে যেগুলো স্থগিত করা… আদালতে সেগুলো স্থগিত হবে কেন? ট্যাক্স দেওয়াটা সব নাগরিকের দায়িত্ব। আমেরিকা বলেন, ইংল্যান্ড বলেন, ইউরোপ বলেন, যারা বিবৃতি দিয়েছে, তারা যদি তাদের দেশে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তাদের কী কোলে তুলে নাচে তারা? তাদের সরকার? না তাদের কাছ থেকে মামলা ফিরিয়ে নেয়। ফিলিপাইনের নোবেল লরিয়েট, তার বিরুদ্ধেও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার মামলা, দিনের পর দিন তাকে সেই মামলায় চলতে হয়েছে। এরকম বহু নোবেল লরিয়েট আছে যারা কারাগারে বন্দিও আছে, পরবর্তীতে অনেক কাজের জন্য।’

বিজ্ঞাপন

‘এখন একজনের জন্য এত এত বিবৃতি না দিয়ে তারা একটা এক্সপার্ট পাঠিয়ে কাগজগুলো একটু দেখুক, দলিল-দস্তাবেজ দেখুক, কী কী কর্মকাণ্ড…। আমি মনে করি, এটা যদি একবার পাঠায়, তাহলে আরও অনেক কিছুই বের হবে। যেখানে হয়ত আমরা কখনো হাতই দেইনি, এরকম বহু কিছু বের হবে। এর থেকে কী বলব? এখন যদি জিজ্ঞেস করেন, আমাদের তো ব্যাংক অনেকগুলো। ব্যাংকে এমডি চাকরি করে। একজন ব্যাংকের এমডি, আর ব্যাংকটি কিন্তু সরকারি, এটা কিন্তু সরকারি স্ট্যাটিউটরি বডি, গ্রামীণ ব্যাংক, তার এমডি যা বেতন তুলতেন সরকারি বেতন। তো সরকারি বেতনভুক একজন ব্যাংকের এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কীভাবে ইনভেস্টমেন্ট করে? আর বাণিজ্য করে?’, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে শত ইন্টেলেকচুয়াল যারা বিবৃতি দিলেন, তারা কি কোনোদিন এ কথাটা একবারও জিজ্ঞেস করেছেন যে, একজন ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থায় কী করে এত টাকা বিদেশে বিনিয়োগ করলেন, ব্যবসা করলেন, আসা-যাওয়া করেন, এতকিছু করেন, কোনো নিয়ম নেই, এ ব্যাপারে কী কেউ খোঁজ নিয়েছে? কোথা থেকে টাকা এলো? টাকা পেল কোথায়? সে কথা আপনারাও কী কখনো জিজ্ঞেস করেছেন? করেননি। এরকম যদি আমাদের কেউ একজন রাজনীতিবিদ করত, লিখতে লিখতে তো সবার কলম-টলম শেষ হয়ে যেত। তো কেন করেননি?’

‘দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলছেন, আর দুর্নীতিবাজ ধরা পড়লে, যদি পছন্দের হয়, তার কোনো দোষ নেই। অপছন্দের হলে তাকে ভালো করে, আচ্ছামত মানে… এই তো অবস্থা আমাদের। আমি আহ্বান করব, আমার এখানে বলার কিছু নেই। তারা নিজেরা এক্সপার্ট পাঠাবে, সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ দেখবে এবং তারাই বিচার করে যাক, এখানে কোনো অপরাধ আছে কি না? সাফ কথা, আর নয়ত আমাদের যে আইন আছে, আদালত আছে, লেবার ল আছে, লেবার কোর্ট আছে, ল উইল টেক ইটস ওন কোর্স’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর/ইআ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন