বিজ্ঞাপন

‘আমেরিকা যার বন্ধু হয় তার আর শত্রু লাগে না’

August 30, 2023 | 7:44 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কেউ কেউ চায়, এখানে এমন একটা সরকার আসুক যারা তাদের পদলেহন করবে। বড় দেশ মোড়লিপনা সব জায়গায় করে থাকে। এরা যার বন্ধু হয় তাদের তো আর শত্রু লাগে না।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা দখল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল, জয় বাংলা নিষিদ্ধ করেছিল। অথচ সেই ৭ মার্চের ভাষণ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। কাজেই বঙ্গবন্ধুর নাম আর এই ভাষণ তারা মুছতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘জয় বাংলা’কে উচ্চ আদালত জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করেছে। আর জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল সংবিধান লঙ্ঘন বলে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। কাজেই তাদের হাতে তৈরি যে দল সে দলই তো অবৈধ হয়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এরা মানুষ খুন করতে জানে। একটু চিন্তা করে দেখেন, কত পরিমাণ অর্থ-সম্পদ তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। সেই টাকা এখন বিদেশে বসে খরচ করে এবং এখানে ফের অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। আর গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী কিছু দেশ আছে তারাও নাকি খালি গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আমরা মহাজোট করি। আমাদেরই প্রস্তাব ছিল ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন স্বচ্ছ করা। আইন করে আমরা নির্বাচন কমিশন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে স্বচ্ছ করা, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ, রক্ত দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেই রক্ত দিয়েই এই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। আর আজ আমাদের শুনতে হয়- গণতন্ত্র খোঁজ করে, ভোটের অধিকার খোঁজ করে। এই ভোটের যে অবস্থা ছিল সেটা তো তারা দেখে নাই।’

আমেরিকার নাম উল্লেখ না করে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কেউ কেউ চায়, এখানে এমন একটা সরকার আসুক যারা তাদের পদলেহন করবে। বড় দেশ মোড়লিপনা সব জায়গায় করে থাকে। এরা যার বন্ধু হয় তাদের তো আর শত্রু লাগে না। ইউক্রেন বন্ধু হয়েছিল। আজকে ইউক্রেনের অবস্থাটা কি দাঁড়িয়েছে? সেই বন্ধুত্বের কারণে তাদের দেশও শেষ এবং সেখানে নারী-শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করে। এটা হলো বাস্তবতা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের কথা আর গুম-খুনের কথা বলে। আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারী সেই খুনি রাশেদ এখনো আমেরিকায়। বারবার অনুরোধ করি তাকে আমাদের ফেরত দেন। আমার দেশের বিচার ব্যবস্থায় সে সাজাপ্রাপ্ত। এই খুনিকে তারা লালন-পালন করে কেন? আরেকজন নূর। সেই নূরও তো এখন কানাডায়। তাদের ফেরত দেয় না। আর খুনি রশিদ-ডালিম তো পাকিস্তানে। এরা কখনো লিবিয়া যায়, কখনো পাকিস্তানে। আরও কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় শুনেছি। তাদের কোন খোঁজ তারা দেয় না। মোসলেম উদ্দিনেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর বাকি যে কয়টা পেয়েছিলাম তাদের রায় কার্যকর হয়েছে।’

বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে যেদিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম সেদিন তারা আমার পাশে ছিলেন। সেদিন তো হাজার হাজার মানুষ। আমি খুঁজেছিলাম কামাল-জামাল-রাসেলকে। তাদের তো আমি এয়ারপোর্টে পাইনি। পেয়েছিলাম বনানীতে, সারি সারি কবর। সবকিছু হারিয়ে বাংলাদেশে যখন ফিরি তখন আমি এই বাংলাদেশের জনগণকেই আমার পরিবার ও আপনজন করে নিয়েছি। এবং তাদের জন্যই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতেই এসেছি। আমার বাবার আদর্শ বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষের ভাগ্য যেন পরিবর্তন করতে পারি। আজ অন্তত বলতে পারি, কিছুটা হলেও আমরা কাজ করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’

এ সময় সরকারের টানা মেয়াদে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াত সরকারের মেয়াদে পানি-বিদ্যুৎ সংকটের কথাও উঠে আসে তার বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় বিদ্যুৎ-পানি পায় না দেখে তাদের এক নেতাকে ধাওয়া দিয়েছিল জনগণ। একথা তারা ভুলে যায় কিভাবে?’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে উন্নয়নের চিত্র তুলে বলেন, ‘১৫ বছর আগের ঢাকা শহর কেমন ছিল? ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ কী ছিল? আর এই ১৫ বছরে বাংলাদেশ কোথায় গেছে বা ঢাকা শহরের কী পরিবর্তন হয়েছে- সেটা মানুষই বিবেচনা করুক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলেই তো আজ এই উন্নয়নটা হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট মিলে কয়টা আসন পেয়েছিল? আর বাকি তো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট আমরা পেয়েছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সরকার টানা মেয়াদে ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হয়েছে বলেও মনে করেন দলীয় প্রধান শেখহাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আজ জাতির একেকটা কাজ যখন আমরা করি যখন মানুষগুলো ঘর পায়, বিদ্যুৎ পায়। তাদের মুখে যখন হাসি দেখি, চোখে পানি দেখি নিজের চোখের পানি রাখতে পারি না। আমার শুধু মনে হয়, নিশ্চয়ই আমার আব্বা বেহেশত থেকে দেখবেন তার দেশের মানুষগুলো ভালো আছেন।’ জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়ন করে তার আকাঙ্ক্ষা পূরণই আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা বলে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন দলীয় প্রধান।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। বক্তব্য দেন- মহানগর উত্তরের সহসভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সহসভাপতি সাদেক খান, আব্দুল কাদের খান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মাজহার আনাম, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন নেসা মেরী।

এছাড়াও বক্তৃতা করেন- মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, সহসভাপতি মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন, দিলীপ কুমায় রায়, বেগম সাজেদা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, গোলাম সারওয়ার কবীর। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং শেখ ফজলে নূর তাপস।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন