বিজ্ঞাপন

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের স্বপ্নপূরণ, রোববার ভোর থেকে যান চলাচল

September 2, 2023 | 4:55 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে পদাপর্ণে রাজধানীবাসীর যানজট ভোগান্তি নিরসনে এবার উদ্বোধন করা হলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয় তথা উড়াল মহাসড়ক। বিমানবন্দরের কাওলা টু ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ছয়টা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশে যান চলাচল শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ৪টার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশের উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে বিকেলে শেরে বাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এর আগে, তিনি কাওলা প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন ও মোনাজাতে অংশ নেন। এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী ফলকের উভয়প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মন্ত্রণলায় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ফলক উন্মোচনে অংশ নেন। এরপর দোয়া মোনাজাত অংশ নেন। আগামীকাল রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে ভোর ৬টা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে কাওলা প্রান্ত থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে বিকেলে সাড়ে তিনটায় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হয়ে উদ্বোধনী ফলক ও মোনাজাতে অংশ নেন। এরপর বাংলাদেশ সেতৃ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। প্রধানমন্ত্রী টোল প্রদান করে গাড়িবহর নিয়ে কাওলা প্রান্ত থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে আসেন।

দ্বিতীয় পর্বে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে বিকেল চারটার দিকে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হয়ে এক্সপ্রেসওয়ে’র ফলক উন্মোচন ও মোনাজাত অংশ নেন। এরপর সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন হয়। বিনিয়োগকারী প্রতিনিধির বক্তব্য প্রদান, বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্য প্রদান করে। এরপর সুধী সমাবেশের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদান করেন।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হয়েছে। রবিবার ঢাকার যানজট ভোগান্তি কমাতে এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশটির দুয়ার খুলে দেওয়া হবে।

মূলত কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের ভেতরে র‌্যাম্প (সংযোগ সড়ক) নামানোর কারণে উড়ালসড়কটি নগরীর যানজট বাড়িয়ে দিতে পারে। এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প রয়েছে। র‌্যামম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। শনিবার এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনকৃত অংশে ১৫টি র‍্যাম্প রয়েছে। বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয় সরণিতে ২টি এবং ফার্মগেটে ১টি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র‍্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনকে চারটি ক্যাটাগরিতে টোল দিতে হবে। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস (১৬ আসনের কম) এবং মিনি-ট্রাক (৩ টনের কম) ৮০ টাকা, মাঝারি আকারের ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত) এবং ৬ চাকার বেশি বড় ট্রাক যথাক্রমে ৩২০ টাকা এবং ৪০০ টাকা দিতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা-ফার্মগেট অংশে ১৬ বা তার বেশি আসন বিশিষ্ট সব বাস ও মিনিবাসকে ১৬০ টাকা দিতে হবে। থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পথচারী চলাচল করতে পারবে না।

বিজ্ঞাপন

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন