বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূসকে ‘হয়রানি’ না করতে ৩০১ আইনজীবীর আহ্বান

September 7, 2023 | 4:13 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘বর্তমান সরকারের হয়রানি’ ও ‘নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ৩০১ জন আইনজীবী।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ৩০১ জন আইনজীবীর পক্ষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।

সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বক্তব্যে বলেন, ‘চার বিভাগকে কাজে লাগিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৭৩টি মামলা বিভিন্ন কোর্টের দায়ের করে তাকে হয়রানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তার প্রতিপক্ষ মনে করে তার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলার কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা যারা আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং ন্যায় বিচারের জন্য প্রতিদিন আইন অঙ্গনে আইনের লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকি, সেই আইনজীবীদের বিবেককে জাগ্রত করে আমরা বলতে চাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এই হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’

‘নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, তাকে ন্যাক্কারজনকভাবে যে হয়রানি করা হচ্ছে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং প্রত্যেক মানুষ যেন সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী রেজাউল করিম রেজা বলেন, “বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত কর্মহীন মানুষদের স্বপ্নের নায়ক, ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন এবং দীর্ঘ সমস্যা ‘দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণের যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন তা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত সমাজ বদলে এক অনন্য নজির।”

‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। দারিদ্র্য দূরীকরণের এক অনবদ্য চিন্তার ফসল এই ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প যা সারাবিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তাই নন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সমর্থন আদায় করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি’ গঠন করে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় করেছিলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করেছেন।’

‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, কগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল, আন্তর্জাতিক গান্ধী শান্তি পুরস্কার ও প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমস পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার জন্য গর্বিত।’

বিজ্ঞাপন

ব্রিফিংয়ে বলা হয়— আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উপলব্ধি করছি যে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের এই মহান কারিগরের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে নানারকম নিপীড়ন ও হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বর্তমান সরকার যাকেই তার প্রতিপক্ষ মনে করে, তাকেই রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নির্যাতন, নিপীড়ন করে নিঃশেষ করার চেষ্টা করছে। বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের রোষানলে পড়ে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় তথাকথিত বিচারিক প্রক্রিয়ায় ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে হয় সাজাভোগ করেছেন, নয়ত কারান্ত্যরীণ আছেন। বাংলাদেশের গর্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া একপেশে, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অবৈধ সরকারের আক্রোশপ্রসূত।

‘আমরা এদেশের আইনজীবী সমাজ মনে করি শাস্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসা ও সরকার প্রধানের ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং নির্মম হিংসার শিকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফরমায়েশি বিচারের নামে যে বিচারিক হয়রানি তা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। আইনজীবী হিসেবে আমরা দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ চাই।’

‘আমরা বাংলাদেশের সাংবিধানিক আদালতের আইনজীবীগণ সরকারের এহেন ফ্যাসিস্ট আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধের জন্য এবং সব ধরনের হয়রানিমূলক চলমান মামলাগুলো প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

ব্রিফিংকালে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব, শাহ আহমেদ বাদল, এ কে এম জজলুল হায়দার আফ্রিক, আশরারুল হক, মোহাদ্দেস টুটুল, আনিসুর রহমান রায়হান, রেজাউল হাসান রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে আহ্বানকারী অন্যরা হলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সুব্রত চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সৈয়দ মামুন মাহবুব, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, রেজাউল করিম রেজা, মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, মোহাম্মদ আলী, জে আর খান রবিন প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন