বিজ্ঞাপন

গুম-খুন নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, বাংলাদেশকে সংশোধনের পরামর্শ

May 14, 2018 | 7:53 pm

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশকে সংশোধন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে এই জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টি তদন্ত করার পরামর্শ দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।

সোমবার (১৪ মে) জেনেভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত ইউপিআর (ইউনির্ভাসেল পিরিওডিক রিভিউ) পর্যালোচনা বৈঠকে এই উদ্বেগ জানানো হয়। এই বৈঠকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী ১৭ মে প্রকাশ করা হবে। সদস্য দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল চার থেকে পাঁচ বছর বছর পর পর এই পর্যালোচনা বৈঠক করে থাকে।

সোমবারের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ সংশ্লিষ্টরা আইনমন্ত্রীকে বৈঠকে সহায়তা করেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, ইউপিআর বৈঠকে বাংলাদেশের বেশকিছু বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। গুম, বাল্য বিয়ে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশকে কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপকে যুগান্তকারী অভিহিত করে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি জুলিয়ান ব্রেইথওয়েথ বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে বাংলাদেশের কিছু বিষয় উদ্বেগজনক। শ্রম অধিকার ও মানব পাচার বিষয়ে বাংলাদেশকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, যেন বিদেশে জোর করে শ্রমিক পাঠানো না হয়। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার দেওয়া পরামর্শ বাস্তবায়নে দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করতে হবে।

পর্যালোচনা বৈঠকে কানাডা, মালদ্বীপ ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের উদ্দেশে বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা ঢাকাকে দিতে হবে। গ্রিসের প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করতে হবে, আইনটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জাপান ও নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। বৈঠকে শরণার্থী বিষয়ে ১৯৫১ সালের আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশকে অনুস্বাক্ষরের আহ্বান জানান সুইজারল্যান্ড, আইভরি কোস্ট, শ্রীলংকা, ঘানা ও ডেনমার্কের প্রতিনিধিরা।

কানাডার প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশকে মতপ্রকাশের (অনলাইন ও অফলাইন) স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়ার প্রতিনিধিরা বলেন, সংবাদকর্মীরা যেন বাধাহীনভাবে ও নিরাপদে কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বৈঠকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিলের আহ্বান জানান উরুগুয়ের প্রতিনিধি; গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের আহ্বান জানান সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এই বৈঠকে গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নারী উন্নয়ন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ মানবাধিকার বিষয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তও বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়ে করে থাকে। এ ক্ষেত্রে তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিচারের উদাহরণ তুলে ধরেন।

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, চারটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৩২টি টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও এবং ১৭টি রেডিও চালু আছে। মোট ১৮শ পত্রিকা বাংলাদেশে প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি সংস্থা প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ বছরে ১৬ হাজার সংবাদকর্মীকে দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। জাতীয় গণমাধ্যম সংস্থা (নিমকো) প্রতিবছর টেলিভিশন মিডিয়ার মোট ২ হাজার ২২৫ জন কর্মীকে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সংবাদকর্মীদের ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে সরকার নবম বেতন কাঠামো কমিটি গঠনের অনুমতি দিয়েছে। সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং এই খাতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আন্তরিক।

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন