বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার জেরে বন্ধ থাকা চবিগামী শাটল ট্রেন চলাচল শুরু

September 10, 2023 | 4:45 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাদ থেকে ছিটকে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতের জেরে দুইদিনেরও বেশিসময় বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর লোকোমাস্টারসহ (চালক) কয়েকজন কর্মচারীকে মারধরের জেরে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রেলওয়ে কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির বৈঠকের পর ট্রেন চালাতে সম্মত হন সংশ্লিষ্টরা। এরপর দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে যাত্রা করে শাটল ট্রেন। এখন থেকে সূচি অনুযায়ী ট্রেন চালানো হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মচারীরা।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের মিটিং হয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। ট্রেন চালকের ওপর হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আর ট্রেনের ছাদে যাতে কেউ উঠতে না পার, সে বিষয়ে প্রক্টর দেখবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ চৌধুরীহাট এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গোমী চলন্ত শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে অন্তঃত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রেনে থাকা লোকোমাস্টার জাহেদুল ইসলাম, সহকারী লোকোমাস্টার মইনুল ইসলাম পাটোয়ারী এবং গার্ড জহিরুল ইসলামকে মারধর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ট্রেন স্টেশনে রেখেই এই তিনজন পালিয়ে যান। এরপর থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাটল ট্রেন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লোকোমাস্টাররা।

এ অবস্থায় শুক্রবার ও শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চলাচল করেনি। রোববার সকালেও সূচি অনুযায়ী কোনো ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। বেলা দেড়টায় ও আড়াইটায় ক্যাম্পাস থেকেও কোনো ট্রেন আসেনি।

বিজ্ঞাপন

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে রেলওয়ে কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এম আর মঞ্জু, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক, রেলওয়ে কারিগর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস কে বারী, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের পাহাড়তলী শাখার সভাপতি ইকবাল আহমেদ, সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার ও রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিলের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী।

এসময় রেলওয়ের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে শাটল ট্রেন চালানোর জন্য ছয়টি শর্ত দেয়া হয়। এগুলো হল— পাহাড়তলী থেকে প্রতিটি ইঞ্জিন সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশের (জিআরবি) কমপক্ষে চারজন সদস্য দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে কর্মচারীদের প্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসন মিলে বৈঠক করা ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা, ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে শিক্ষার্থী উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন ব্যবস্থা নেয়, ছাত্রদের সচেতন করা এবং লোকমাস্টারদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।

ফলপ্রসূ বৈঠকের পর রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের ছাদে কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। ছাদে যাতে কেউ উঠতে না পারে সেজন্য রেলকর্মীরাও তৎপর ছিলেন। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বারবার দাবি জানানোর পরও শাটল ট্রেনের বগি এবং সূচি না বাড়ানো হয়নি। ভিড়ের কারণে অনেক ছাত্র ছাদে উঠতে বাধ্য হন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী উর্মি রাণী মোহন্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বগিতে লাইট-ফ্যান নেই। বগির সংখ্যা যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীর তুলনায় অনেক কম। আমরা বারবার বগি বাড়ানোর কথা বলেছি। ট্রেনের সূচি বাড়ানোর কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হয়নি। এ বছর প্রচণ্ড গরম পড়ছে। যত ছাত্রছাত্রী সিটে বসে যেতে পারে, তার চেয়ে কয়েকগুণ শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে অথবা ফ্লোরে বসে যেতে হয়। অনেকে গরম আর ভিড়ের মধ্যে ঠাসাঠাসি সহ্য করতে পারে না। এজন্য ছাদে ওঠে।’

এদিকে দুর্ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতভর উত্তাল ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে ছাত্ররা বেরিয়ে মূল ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি উপাচার্যের বাসভবন, পুলিশ ফাঁড়ি, শিক্ষক ক্লাব এবং পরিবহন দফতরে ঢুকে ভাংচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বেশকিছু প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, ট্রাক ভাংচুরের শিকার হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে চাঁদা দাবি ও ভাংচুরের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করেন। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় দায়ের সাতজনের করে নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন