দায়িত্ব নিলেন গাজীপুরের মেয়র জায়েদা, পাশে ছিলেন ছেলে জাহাঙ্গীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) তিনি নগর ভবনে মেয়রের কার্যালয়ে নিজ চেয়ারে বসেন। এ সময় তার ছেলে ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সকালে তার দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মহানগরীর বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নগরীর ছয়দানার নিজ বাসা থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মোটর শোভাযাত্রাসহ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মেয়র।

এতে নেতা-কর্মী ছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলররা অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম শফিউল আজম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গাসিক দ্বিতীয় পরিষদের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে তাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে সাধারণ ক্ষমার আওতায় তাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

আলোচিত এই দুই মেয়াদেই সর্বমোট ৪৮ মাস ১৩ দিন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) গাজীপুর নগর ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপনী বক্তব্য দিয়ে তিনি বিদায় নেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের আনুষ্ঠানিক বিদায় গ্রহণের মধ্য দিয়ে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ভারমুক্ত হলো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক)। গাসিক গঠনের পর তার দ্বিতীয় পরিষদের মেয়াদ রোববার মাসিক সমন্বয় সভার মাধ্যমে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল তবে ভারপ্রাপ্ত মেয়র এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে নগর ভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেন। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম মাসিক সভার মধ্য দিয়ে এ পরিষদের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

গাজীপুর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম জানান, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় পরিষদের প্রথম মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই হিসাব আইন অনুযায়ী গাসিকের দ্বিতীয় পরিষদের মেয়াদ রোববার (১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) শেষ হয়েছে। তৃতীয় বা নতুন পরিষদের মেয়াদ গণণা শুরু হবে প্রথম মাসিক সভা যেদিন হবে সেদিন থেকে। আগামী ১৭ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর নতুন পরিষদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর নবনির্বাচিত পরিষদের প্রথম মাসিক সভা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

এদিকে, নতুন পরিষদকে স্বাগত জানাতে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নগর ভবন। নবনির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুনের অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নগরীতে সাজ সাজ রব বিরাজ করে। নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম অভিষেক অনুষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করেন।

অনুষ্ঠানে মেয়র জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আপনারা ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমার আগে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। এ জন্য আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই।’

জায়েদা খাতুন আরও বলেন, ‘গাজীপুর নগরবাসী আমার ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছে, তার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এবং আমার ছেলে জাহাঙ্গীরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর-আধুনিক নগর নগরবাসীকে উপহার দেব।’

অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর আলম তাকে সাময়িক বরখাস্তের সমালোচনা করেন বলেন, ‘বলা হয়েছে, আমি আত্মসাৎ করেছি। ২১ মাসে আপনারা কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি।’

এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘আপনারা মাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এ জন্য গাজীপুরবাসীকে-দেশবাসীকে সালাম জানাই। মা-ও বলেছেন, তাঁর জীবনবাজি রেখে আপনাদের পাশে থাকবেন, সেবা দেবেন। জন্মের পর, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমি সংগঠনের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব করার কাজটি শিখেছি।’

গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। ভোট দিয়েছেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ জন। নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ৭৬ ভাগ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট এবং আজমত উল্লাহ খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। জায়েদা খাতুন নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৪১ ভাগ ভোট পেয়েছেন। আর মোট ভোটারের ২০ দশমিক ২৫ ভাগ।

সারাবাংলা/একে