বিজ্ঞাপন

নাবিলার প্রাপ্য টাকা মেয়ের নামে জমা রাখার দাবি স্বজনদের

May 14, 2018 | 10:40 pm

।। আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় মারা যান ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজের ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলা। নাবিলার একমাত্র মেয়ে ইনায়া ইমাম হিয়ার বয়স আড়াই বছর। হিয়া বোঝে না, তার মা আর কখনো ফিরবে না। আর এতেই উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত নাবিলার স্বজন ও বন্ধুরা।

তারা বলছেন, ছোট্ট মেয়েটির মা নেই, বাবা ‘রিলায়েবল’ নন। তাই মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ক্ষতিপূরণের প্রাপ্য অর্থ নাবিলার মেয়ের নামেই জমা রাখা দরকার।

“নাবিলার একাধিক বন্ধু এবং স্বজন সারাবাংলাকে জানান, বিয়ের কিছুদিন পরই ইমাম হাসানের সঙ্গে নাবিলার দাম্পত্য জীবন স্বাভাবিকত্য হারায়। ওদের সর্ম্পক ভালো ছিল না। হাসানের নাখালপাড়ার বাসায় থাকত না নাবিলা। প্রথমে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং পরে উত্তরায় বাসা ভাড়া নিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

হাসান মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা, কয়েকবার কারাগারেও যেতে হয়েছে, নাবিলাকে সন্দেহ করত, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করত- একাধিক কারণে নাবিলা বিপর্যস্ত ছিল। ডিভোর্সের সিদ্ধান্তও নিয়েছিল।”

নাবিলার একাধিক বন্ধু সারাবাংলাকে জানান, “১২ মার্চ ফ্লাইটে যাওয়ার আগেও আমাদের সঙ্গে ডিভোর্স বিষয়ে কথা বলেছে নাবিলা।” নাবিলা তাদের জানিয়েছিলেন, মার্চ মাসেই ডিভোর্সের প্রক্রিয়া শুরু করতে চান।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, নাবিলার স্বামী ইমাম হাসান দু’টি মাদক মামলার আসামি। একটি মামলায় তিনি জামিনে থাকলেও অন্য মামলায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তাই ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ নাবালিকা মেয়ের নামে ব্যাংকে জমা রাখার দাবি জানিয়েছে নাবিলার বন্ধুরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাবিলার একাধিক বন্ধু সারাবাংলাকে বলেন, ক্ষতিপূরণের টাকা ইমাম হাসানের হাতে গেলে নাবিলার মেয়েটির ভবিষ্যত অন্ধকারেই থাকে যাবে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানার পূর্ব কুনিপাড়া থেকে গ্রেফতার হন হাসান ইমামসহ দুইজন। পরেরদিন তাদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত বছরের ২৩ অক্টোবর জামিন নেন হাসান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ (১) এর ৯ (ক) ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে মাদক দ্রব্য তথা ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে ইমাম হাসানসহ আরেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অভিযোগপত্র নম্বর-৩৮৪।

বিজ্ঞাপন

অন্য মামলাটিও একই থানায়। মামলা নম্বর-২৬/১৭। গত বছরের ২৭ আগস্ট এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয় (নম্বর-৩২৭)। এই মামলায় ইমাম হাসানকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয় গত ২৯ জুলাই।
বর্তমানে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গত ১৩ মে চার্জ শুনানির জন্য তারিখ ঠিক থাকলেও আাসমি হাজির হননি। আর এই অনুপস্থিতির কারণে মামলার পরবর্তী তারিখ ৮ অক্টোবর ঠিক করা হয়।

ইমাম হাসানের নামে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহ আলম তার এজাহারে লিখেছেন, মোট প্রায় ২২ হাজার টাকার বেশি ইয়াবা উদ্ধার করা হয় মো. ইামাম হাসানসহ অন্য দুই আসামির কাছ থেকে। গ্রেফতার করার সময় তারা পালানোর চেষ্টা করে এবং ইয়াবা সর্ম্পকে তাদের কাছে কোনো সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। বিক্রি করার জন্য নিজেদের কাছে এই মাদকদ্রব্য রেখেছিল বলেও উল্লেখ করেন মো. শাহ আলম।

এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কে এম মারুফ হাসান রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ইমাম হাসানসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলা আমি তদন্ত করেছি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এজাহারও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট দিলরুবা শারমীন সারাবাংলাকে বলেন, বাবা যদি মাদকাসক্ত হন এবং তার বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের অভিযোগে মামলা হয়ে থাকে তাহলে তার কাছে সন্তান কোনোভাবেই নিরাপদ না।

আইনের জন্য মানুষ না কি মানুষের জন্য আইন- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ইমাম হাসান মাদকসেবী, তার নামে মামলা রয়েছে এবং তিনি মাদক বিক্রেতা হিসেবেও পরিচিত- কোনোভাবেই স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার অর্থ পেতে পারেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী, মাদকাসক্ত, চরিত্রহীন এবং সিফিলিস-গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত বাবা কন্যা সন্তানের দায়িত্ব পাবে না।

দিলরুবা শারমীন বলেন, কোনো অবস্থাতেই নাবিলার সম্পত্তি, সম্পদ বা উপার্জিত অর্থের অংশিদার বা মালিক তার এই মাদকাসক্ত স্বামী হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, তিনি কেবল নাবিলার স্বামী নন- তিনি কারাগার থেকে জামিন নিয়ে আছেন, তিনি একজন আসামি। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে এবং মামলা বিচারাধীন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আইনজীবী সারাবাংলাকে বলেন, আইনে রয়েছে মৃতের স্বামী সম্পদের ২৫ শতাংশ পাবে, মেয়ে পাবে অর্ধেক। কিন্তু আইনে যাই থাকুক, যেহেতু স্বামী একজন মাদকসেবী এবং মাদকবিক্রেতা, একাধিক মামলার আসামি তাই মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ছোট মেয়েটির নামে টাকা জমা রাখার কথা ভাবা যেতে পারে।

নাবিলার এক স্বজন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সবার আগে হিয়ার নিরাপত্তা চাই। ইতোমধ্যে নাবিলার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন নাবিলার প্রাপ্য টাকা দিয়ে কী কী করবে সেই পরিকল্পনা করছেন। ওই আড়াই বছর বয়সী মেয়েটির কথা কেউ চিন্তা করেনি। ‘পুরো পরিবারই ঠগি’ মন্তব্য করেন তিনি।

বলেন, তাই আমাদের আবেদন নাবিলার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের শতভাগ টাকা তার মেয়ের নামে জমা রাখা হোক। হিয়ার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে পর্যন্ত ওই অর্থ কেউ যেন তুলে নিতে না পারে।

সারাবাংলা/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন