বিজ্ঞাপন

বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান নৌকার এমপি মাইজভাণ্ডারি

September 19, 2023 | 8:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পদত্যাগ চেয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি।

বিজ্ঞাপন

একদিন আগেই নজিবুল বশর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন, যার ছড়িয়ে পড়া ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ নির্বাচনি এলাকা ফটিকছড়ির উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থিত হয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগান তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি বলেন, ‘আমি কিছু বললে ফেসবুকে সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। যারা ফেসবুকে লেখেন, তাদের উদ্দেশে বলব— আমি জোটের নেতা, আওয়ামী লীগের নেতা না। আমার দল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা চুপ থাকবেন না, আপনাদের কাজ হচ্ছে সরকারের সমালোচনা করা, আপনারা বলবেন এবং সরকারকে শুধরে দেবেন।’

দ্রব্যমূল্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ দ্রব্যমূল্যের কী অবস্থা? একটা ডিম কিনে খাওয়ার উপায় আছে? বাণিজ্যমন্ত্রী আলুর দাম বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু উনার কথা কেউ শুনছেন না। আমার মনে হয়, বাণিজ্যমন্ত্রীর নিজের পদত্যাগ করা উচিত। আমি বাণিজ্যমন্ত্রী হলে তো পদত্যাগ করতাম, যদি জনগণ আমার কথা না শুনত।’

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গ টেনে নজিবুল বশর বলেন, ‘যারা সিন্ডিকেট ব্যবসা করে, হাতেগোনা কয়জন, বড়জোড় ১২-১৪ জন বা ২০ জন, এদের সবাই চিনে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, কোনো সরকার কখনো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। মনে হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে এরা আরেকটা বড় সরকার। চট্টগ্রামে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বড় বড় ব্যবসায়ী কারা, ঢাকায় কারা, আমরা চিনি। কিন্তু এদের নাম কেউ বলে না। আওয়ামী লীগ বলে না, বিএনপি বলে না, জামায়াত বলে না, জাতীয় পার্টিও বলে না। আমার দল ছোট দল, সেজন্য আমি বলি না। সিন্ডিকেটে কারা কারা আছে সেটা সাংবাদিকরাও জানেন। কিন্তু উনারা লিখেন না। কারণ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বড় বড় বিজ্ঞাপন পান।’

‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, আপনার মন্ত্রিসভার কোনো মন্ত্রী সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে বের করে দেন। সামনে নির্বাচন, আল্লাহর দোহাই লাগে। এই ১৫-২০ জনের সিন্ডিকেট, এদের গ্রেফতার করুন,’— বলেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত স্বাধীনতার শত্রু, জামায়াত এ দেশের শত্রু। আমার দলের মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধের জন্য আমার দল মামলা করে। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কীভাবে চলছে? জামায়াত প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভূমিকা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আমি সেই জায়গা থেকে ওনাকে সরে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। পশ্চিমা বিশ্ব বিএনপির পক্ষে অবস্থান নেয়নি। কৌশলগত কারণে সরকারকে চাপে রাখতে চায়, সেটা সহসা সমাধান হয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির রাহমান সানি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নাহার মুক্তা, পৌর মেয়র এ কে জাহেদ চৌধুরী ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরেফিন আজিম।

এর আগে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে ফটিকছড়িতে এক সভায় সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন এটা যেমন নিশ্চিত, আমিও ফটিকছড়ি আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হব, এটা বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি বলেছি, এবার অপমান সহ্য করব না, পছন্দ না হলে বলে দেবেন, একাই পদত্যাগ করব। কিন্তু আমি পদত্যাগ করলে সরকার ঠিক থাকবে কি না…।’

এ বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সোমবার আরেক সভায় মাইজভাণ্ডারি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে থ্রেট করিনি। আমি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি প্রয়োজনে নীরবে চলে যাব, কিন্তু আমার দ্বারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ক্ষতি হবে না বা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পরিবারের কোনো বদনাম— প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজনে তার জন্য জীবন দেব।’

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুদফায় নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। একসময়ের আওয়ামী লীগ নেতা মাইজভাণ্ডারি ১৯৯১ সালে একই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু সংসদ সদস্য থাকাকালীন মাঝপথে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ত্যাগ করে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন গঠন করেন। তার দল এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন