বিজ্ঞাপন

ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্ম সংরক্ষণের দাবি

September 21, 2023 | 4:37 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্মসহ তাঁর স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। পাশাপাশি তার শিল্পকর্মের চৌর্যবৃত্তি রোধেরও দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের নানারকম শিল্পকর্ম যেন কেউ ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের নামে কপিরাইট করতে না পারে সেই দাবি করলেও যেন সরকার নিজে কপিরাইট করে সংরক্ষণ করে সেই দাবি জানিয়ে আসছি। সরকার নিজের আওতায় রেখে প্রয়োজনে লেখক, গবেষকদের ব্যবহার করতে দিক।’

এ সময় তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সম্পর্কে বলেন, ‘১৯৯৯ সালে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরেন। এর আগে সামাজিক কারণে কেউ-ই কথা বলতে রাজি হননি। পাঁচ লাখ নির্যাতিত নারীর প্রতিনিধি হয়ে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীই প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরেন।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মেয়ে চারুশিল্পী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাস্কর্য শিল্পের ইতিহাসে নভেরা আহমেদ, শামীম শিকদার এবং ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী এই তিনজন নারী ভাস্কর তাদের আপন মহিমায় চির ভাস্বর। এর মধ্যে আমার মা ভাস্কর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জীবন সংগ্রাম ও কর্মযজ্ঞ নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য এক আলোকবর্তিকা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক প্রবাসী আখতার আহমেদ রাশা নিউ ইয়র্ক, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর বিভিন্ন ভাস্কর্য নকল করে মৌলিক শিল্পকর্ম হিসেবে প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি আরও কেউ কেউ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্ম সামান্য পরিবর্তন বা বিকৃত করে নিজেদের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘একজন অগ্রজ শিল্পীর শিল্পকর্ম, মাধ্যম, দর্শন বা জীবনবোধ দ্বারা যে কোনো ব্যক্তি বা শিল্পী অনুপ্রাণিত হতেন পারেন। কিন্তু অনুসরণ আর অনুকরণের মধ্যে যে পার্থক্য তা অনুধাবন করা জরুরি। অনুকরণ, নকল বা কপি করা কাজ কখনো মৌলিক শিল্পকর্ম হিসেবে প্রদর্শিত হতে পারে না। এটি নন্দনতত্ত্বের নৈতিকতার পরিপন্থি। ক্রমাগত নকল করে প্রকৃত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিবর্তে বরং তার সমগ্র জীবনের সাধনাকে অসম্মান করা হয়। আমি নিজে শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত থেকে অনুসরণকে উৎসাহ দিলেও অনুকরণকে স্বাগত জানাতে পারি না। তাই সঙ্গত কারণে এই অশিল্পীসুলভ আচরণের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। যেহেতু মৌখিকভাবে বহুবার অনুরোধের পরও আখতার আহমেদ রাশার এ চৌর্যবৃত্তিকে নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়নি, তাই আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, “আমার মা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং শিল্পকর্মের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। স্বাধীনতার পর পরিবার ও সমাজের সকল নিগ্রহ আর অবজ্ঞা অগ্রাহ্য করে বেঁচে থাকার অমোঘ বাসনায় প্রিয়ভাষিণী পথ চলতে কুড়িয়ে নিয়েছিলেন মরা ডালপালা, গাছের শেকড়-বাকল। পরিত্যক্ত সামগ্রীর মাঝে সমাজের কাছে অবহেলিত নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। বেঁচে থাকার অবলম্বন, অদম্য সাহস আর আত্মবিশ্বাস থেকে সৃষ্টি করলেন নান্দনিক সব ভাস্কর্য। সেইসব অনবদ্য সৃষ্টিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, শিল্পী হিসেবে প্রিয়ভাষিণীকে পরিচিত করতে উদ্যোগী হন কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান।”

বিজ্ঞাপন

‘মূলত, কুড়িয়ে পাওয়া ও পরিত্যক্ত গাছের গুঁড়ি, শুকনো ডাল, বাঁশ, পানিতে ভেসে আসা কাঠের খণ্ড, গাছে জন্য নেয়া ছত্রাক ইত্যাদি ছিল প্রিয়ভাষিণীর ভাস্কর্য তৈরির উপকরণ ও মাধ্যম। দেশে-বিদেশে শিল্পানুরাগীদের কাছে সমাদৃত এ ভাস্কর্যগুলো কেবল দৃষ্টিনন্দনই নয়, এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে পরিবার ও সমাজে নিগৃহীত একজন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা নারীর আগুনপাখি ফিনিক্স হয়ে ওঠার গল্প।’

‘সরকারি-বেসরকারি সকল জাদুঘর, সংগ্রহশালা- সর্বোপরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের ভাস্কর্য সংরক্ষণে এগিয়ে আসা। এগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ সময়ের মহামূল্যবান নিদর্শন। এসব সম্পদকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অসাধুতা গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক এবং মহীয়সী মায়ের সন্তান হিসেবে আমি মনে করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর রেখে যাওয়া অমূল্য ভাস্কর্যসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।’

এতে আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন অভিনয়শিল্পী শম্পা রেজা, লেখক অ্যাকটিভিস্ট শারমিন শামস্, অ্যাকটিভিস্ট শাশ্বতী বিপ্লব, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহাদাত রাসেলসহ অনেকে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন