বিজ্ঞাপন

আ.লীগ-বিএনপিতে শিল্পপতি, শক্ত প্রার্থী খুঁজছে জাপা

September 22, 2023 | 10:27 pm

রাব্বী হাসান সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: আর মাত্র কয়েক মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যদিও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সরাসরি নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলছে না। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই দাবিতে তারা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় থেমে নেই উত্তরের জেলা রংপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

তবে এক সময়ের প্রচলিত বাণী ‘রংপুরের মাটি, জাতীয় পার্টির ঘাঁটি’ এবং ‘রংপুরের রাজনীতিতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদই যে শেষ কথা’- বাস্তবে এখন আর এমন নেই। আগে রংপুর জেলার সবক’টি আসনই জাতীয় পার্টির দখলে থাকতো। কিন্তু এখন সেই চিত্র আর নেই। ছয়টি আসনের মধ্যে টানা মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে জেলার চারটি আসন। বাকি দুটি আসনও নিজেদের দখলে নিতে দীর্ঘদিন থেকেই তৎপর সরকারি দলটি। কিন্তু মহাজোটের শরিক হওয়ায় বার বার রংপুরের এই দু’টি আসন ছেড়ে দিতে হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। তবে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটিতে দ্বন্দ্বের সুযোগকে এবার কাজে লাগিয়ে আসন দু’টি দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তেমন কোনো তৎপরতা নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক পরিক্রমায় এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে থাকছে রংপুর-৪ আসন (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের চিত্র।

রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের রাজনীতি নিয়ে কথা উঠলেই নাম উঠে আসে বেশ কয়েকজন শিল্পপতির। এই আসনে বরাবরই লড়াই হয় শিল্পপতিদের মধ্যে। আসনটিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি- তিনটি রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে বেশ প্রভাব। নির্বাচন সামনে রেখে তিন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রতিটি দলেই রয়েছেন একাধিক প্রার্থী।

এই আসনটি থেকে ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির শাহ আলম। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে জয় পান শিল্পপতি করিম উদ্দীন ভরসা। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান শিল্পপতি টিপু মুনশি। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি, টিপু মুনশির গত ১৪ বছরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে তার আসনসহ রংপুরে ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়মূলক কাজ করেছেন। তবে স্থানীয় ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দাবি, এই আসনটিতে গতানুগতিক উন্নয়ন হলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো কাজ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

এই আসনে টিপু মুনশির চেয়ে আওয়ামী লীগের কোনো শক্তিশালী প্রার্থী নেই। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা টিপু মুনশি ছাড়া বিকল্প কাউকে দেখছেন না। তাই এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া এই আসনে মনোনয়ন পেতে দৌড়-ঝাঁপ করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগের সহ-সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ।

বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার একজন একনিষ্ঠ কর্মী। এই আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর আমি ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, যা এর আগে হয়নি। টিপু মুনশি মানে নৌকা, আর নৌকা মানে উন্নয়ন। সে উন্নয়ন ঘটাতেই এ আসনের মানুষ আবারও আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই আসনে আওয়ামী লীগের আমলে যতটা উন্নয়ন হয়েছে অন্য কোনো সরকারের আমলে তা হয়নি। বর্তমান এমপি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এলাকার জন্য অনেক কাজ করেছেন। তবে দলীয় প্রধান যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।’

বরাবরই ‘ভরসা পরিবারের’ লড়াই এ আসনে বেশ আলোচিত হয়। শিল্পপতি রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এই আসনে বিএনপির অবস্থা আগে থেকেই কিছুটা নড়বড়ে ছিল। তবে বিগত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা এক লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেন। এবার এমদাদুল হক ভরসা ছাড়াও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

এমদাদুল হক ভরসা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জীবিত। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আমিই নির্বাচিত হব।’

বিজ্ঞাপন

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আফসার আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। সেজন্য আমি এই আসনে ভোটের জন্য মনোনয়ন চাইব। কারণ, মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না।’

তবে হারানো আসনটি ফিরে পেতে চায় জাতীয় পার্টি। তাই দল শক্ত প্রার্থী খুঁজছে। যদিও পীরগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এই আসনের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই আসনে গতানুগতিক উন্নয়ন হয়েছে। সেজন্য মানুষ জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে এই আসনে নির্বাচনের জন্য আমাকে কাজ এ আসন থেকে নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।’

কাউনিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহিন সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাউনিয়া-পীরগাছায় তেমন কোনো উন্নয়নই হয়নি। এ আসনের মানুষ কোনো বহিরাগতকে নয়, স্থানীয় প্রার্থীকেই নির্বাচিত করতে চায়। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকে। রংপুর মানেই এরশাদ, আর এরশাদ মানেই লাঙ্গল। লাঙ্গলের জোয়ারে নির্বাচিত হয়ে এ আসনের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে আমাদের প্রার্থী।’

রংপুর-৪ আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৭ জন পুরুষ, ২ লাখ ৪৪ হাজার ২১ জন নারী ও ৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে টিপু মুনশি জয়লাভ করেন। তিনি ভোট পান ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০৭টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির করিম উদ্দীন ভরসা ১ লাখ ৩ হাজার ৬৪৩ ভোট। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির করিম উদ্দীন ভরসা ৫ হাজার ৯৮৬ ভোট। এ ছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনেও টিপু মুনশি জয়লাভ করেন। সেই নির্বাচনে তিনি পান ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা পান ১ লাখ ৪ হাজার ১৭০ ভোট।

সারাবাংলা/আরএইচএস/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন