বিজ্ঞাপন

ফের ঢল নামবে যশোর রোডে, মনে করিয়ে দেবে শরণার্থীদের দুর্দশা

September 22, 2023 | 8:32 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর। মহান মুক্তিযুদ্ধে লড়াই তখন তুঙ্গে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে তখন দলে দলে দেশ ছাড়ছে মানুষ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী যশোর জেলা দিয়ে তখন ভারতের পথে মানুষের ঢল। নিজ দেশ, নিজ ভূমি ছেড়ে তারা যে হয়ে পড়েছেন শরণার্থী!

বিজ্ঞাপন

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক যশোর রোডে যুদ্ধবিভীষিকা, শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্দশা ও যুদ্ধচিত্র নিয়ে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছিলেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’, যে কবিতাটি যুদ্ধবিরোধী এক কালজয়ী রচনার উদাহরণ হয়ে রয়েছে। গিন্সবার্গের যশোর রোড কবিতায় যেভাবে যুদ্ধের চিত্র মূর্ত হয়েছে, ঠিক তেমনই ফের যশোর রোডে নামবে মানুষের ঢল। তবে শরণার্থী নয়, শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিক্ষার্থীরা সেই শরণার্থীদের আদলে প্রতীকী পদযাত্রা করে ফুটিয়ে তুলবেন একাত্তরের অবর্ণনীয় দুর্দশাকে।

যশোর রোডের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই নেওয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। ‘স্মরণে সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড-৭১’ শীর্ষক দুই দিনের এই আয়োজনের উদ্যোক্তা জেলা প্রশাসন। এ আয়োজনে যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।

অ্যালেন গিন্সবার্গ ও তার লেখা সেই বিখ্যাত কবিতা। ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ও আগামীকাল শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুই দিন চলবে অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও যুদ্ধকালীন যশোর রোডে শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্দশা ও যুদ্ধচিত্র ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী মঞ্চায়নের মাধ্যমে ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’কে স্মরণ করা হবে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুই দিনের এই আয়োজনের প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ঐতিহাসিক যশোর রোড ঘিরে আছে অনেক গল্প-গান। মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখো মানুষ জীবন বাঁচাতে এই পথ দিয়েই ভারতে আশ্রয় নেন। অবর্ণনীয় দুর্দশা ও যুদ্ধচিত্র নিয়ে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ রচনা করেছিলেন কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। কবিতাটি পড়লে বর্বর পাকিস্তানিদের নির্মম-নৃশংস গণহত্যার চিত্র যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

একাত্তরে যশোর রোডে শরণার্থীর ঢল। ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সেই ঐতিহাসিক যশোর রোডকে স্মরণ করতে চাই। যুদ্ধদিনের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা জানাতে চাই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের। এ জন্য জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক অঙ্গন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে হবে এই স্মরণ অনুষ্ঠান।

জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঐতিহাসিক যশোর রোড দিয়ে লাখো মানুষ জীবন বাঁচাতে যেভাবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, প্রথম দিন আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় সেই শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্দশা ও মানুষের ঢল নামার প্রতীকী পদযাত্রা শুরু হবে। যশোর রোডের পুলেরহাট বাজার থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রা শেষ হবে কৃষ্ণবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

বিজ্ঞাপন

যশোর রোড এখন। ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার বিকেলের এই পদযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শিল্পীদের অংশগ্রহণে এই সড়ক ধরে চলা ভারতগামী শরণার্থী বাঙালির অবর্ণনীয় কষ্ট ফুটে উঠবে। ছেঁড়া জামা, কাঁদামাটি, খালি গায়ে রুগ্ন শরীরে হেঁটে চলার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হবে। বৃদ্ধ মা-বাবাকে পিঠে তুলে হেঁটে চলার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলবেন কেউ, অন্য কেউ আবার গরুর গাড়িতে নিজেদের শেষ সম্বল নিয়ে অজানা ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ানোর অনিশ্চিত দৃশ্যপট তৈরি করবেন।

এ ছাড়া এ দিন সন্ধ্যায় কৃষ্ণবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাতে গিন্সবার্গের সেই কালজয়ী কবিতা অবলম্বনে গীতি নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন করা হবে।

আয়োজনের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল শনিবার যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে যশোরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতা-গান পরিবেশনার পাশাপাশি থাকবে অন্যান্য আয়োজন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন