বিজ্ঞাপন

৭৭ বছরে শেখ হাসিনা

September 28, 2023 | 12:00 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ (২৮ সেপ্টেম্বর)। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা‘র জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ফের তার নেতৃত্বে দ্বাদশের ভোটযুদ্ধেও শামিল হবে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এখন আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির রোল মডেল হিসেবেও প্রশংসিত।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করবে।

শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কদাচিৎ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা সবার বড়। তার ছোট ভাই-বোনরা হলেন— শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের এক কলঙ্কিত রাতে মা-বাবাসহ ভাইদের সবাইকেই হারিয়েছেন শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাই কেবল জীবিত রয়েছেন। ওই সময় পড়ালেখার জন্য জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন দুই বোন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসনে। পুরানো ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন তারা। পরে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে।

বিজ্ঞাপন

১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শরু করেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। ওই সময় তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে কিশোর বয়স থেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ছয় দফা দাবিতে ওই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ তৈরি হলে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। কারাগারে আটক অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দায়ের করেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর শঙ্কা, অনিশ্চয়তা ও অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট। এই ঝড়ো দিনগুলোর মধ্যেও কারাবন্দি পিতার আগ্রহে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় বাঙালি জাতির ১১-দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকহানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যায়, তখন বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে ঢাকার এক বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ওই সময় গৃহবন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি মুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি জন্ম দেন একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করলে আর দেশে ফিরতে পারেননি দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শুরু হয় তাদের প্রবাস জীবন। তবে ১৯৮১ সালে ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের এক ঐতিহাসিক কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন করে দিকহারা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।

পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় পায় বিএনপি-জামায়াত জোট। এসময় আবার সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চরম দমন-নিপীড়ন শুরু হয়। ২০০৪ সালে একুশে আগস্ট তদানীন্তন বিএনপি-জামাত জোটের সরকারি মদতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে চালানো হয় পরিকল্পিত নারকীয় গ্রেনেড হামলা। ওই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করলে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে তার শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সেদিনের হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন অসংখ্য নেতাকর্মী।

এরপর ধীরে ধীরে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে রুখে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। বাংলার আপামর মানুষ তার আহ্বানে রাজপথে নেমে আসে। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনের অবসান হলেও সংবিধান লঙ্ঘন করে বিএনপির রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করেন। শুরু হয় নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি। শেখ হাসিনা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে শুরু হয় গণআন্দোলন। বাতিল হয় পাতানো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ইয়াজউদ্দিন। ঘোষিত হয় জরুরি অবস্থা। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

এরপর আবার নতুন ষড়যন্ত্র। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে হাজির করেন ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ফিরে আসেন দেশে। এরপর মাত্র দু’মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর তাকে জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক ষড়ন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। এমনকি কারাগারেও তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। তাই রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

বিজ্ঞাপন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। তার নেতৃত্বাধীন সরকার আজ সফলতার সঙ্গে টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনা করছে।

এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্য গাঁথা এই কর্মময় জীবন কুসমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিলেন গৃহবন্দি। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বার বার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২১ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ’৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন, তা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। শেখ হাসিনার জন্মদিন তাই গোটা বাঙালি জাতির জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন।

বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। বাদ আসর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দলের উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। একই সাথে সকাল ৯টায় মেরুল বাড্ডার বৌদ্ধ মন্দির, সকাল ৯টায় খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।

পরেরদিন শুক্রবার বিকাল তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন।

আওয়ামী লীগের গৃহীত কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোচনা সভা, আনন্দ র‌্যালি, শোভাযাত্রা, সারাদেশের সকল মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার জন্য দলসহ সকল সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থার সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন