বিজ্ঞাপন

নির্বাচন নয়, কমিশন নিয়ে প্রশ্ন

May 15, 2018 | 10:56 pm

।। জান্নতুল ফেরদৌসী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা:
বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ভোট ডাকাতির অভিযোগ করা হলেও খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিস) নির্বাচন আপাতদৃষ্টিতে সুষ্ঠু হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা থাকলেও এই নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে তা হয়নি, এটা স্বস্তির। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনে বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি, প্রার্থীদের হলফনামা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ের মতো বিষয়গুলোতে ইসির পদক্ষেপ সন্তোষজনক নয়। এসব বিষয়ে ইসির আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন ছিল।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। শুরুতেই প্রার্থীদের হলফনামা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। আবার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। অথচ নির্বাচন কমিশনেরই এ বিষয়ে ভূমিকা রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু তারা সেই ভূমিকা পালন করেনি।’

খুলনা সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভিযোগ ছিল, ওই কর্মকর্তার বিভিন্ন পদক্ষেপ নির্দিষ্ট একটি দলকে সুবিধা দিচ্ছে। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য ঊর্ধ্বতন একজনকে খুলনায় পাঠানো হয়। এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বদিউল আলম মজুমদার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর নজরদারির ঘটনা নজিরবিহীন। এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এটা নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতারই প্রতিফলন। ইসিকে এ ধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে।’

সুজন সম্পাদক বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের জন্য যারা দায়ী, এখন তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিৎ নির্বাচন কমিশনের। তাদের নিজেদের ভূমিকারও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা উচিৎ।

আগামী দিনে যেন শক্ত ভূমিকা রাখতে পারে, সেই জায়গাটি নিশ্চিত করার জন্য ইসিকে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম। তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং তাদের দায়-দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাই নিজেদের শক্তিশালী করার জন্য তাদেরই কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কেসিসি নির্বাচন ভালো হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক আইন উপদেষ্টা শাহদীন মালিক।

তিনি বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে কিছু ব্যত্যয় ছাড়া খুলনার নির্বাচন সার্বিকভাবে সুষ্ঠু ও ভালো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে কিছু অনিয়মের অভিযোগ তো ছিলই। তবু রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতোই এই নির্বাচনও ভালো হয়েছে।’

ভালো নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন এই আইনজীবী। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে আগামী দিনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসির কিছু ভুল-দুর্বলতা তো আছেই। আশা করব, তারা যেন সামনের দিকে সেসব কাটিয়ে উঠে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। এই নির্বাচনসহ আগের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে যেন তারা শিখতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের শক্তিশালী ভূমিকার বিকল্প নেই।’

খুলনা সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়েই বিজয়ী হয়েছেন। তবে তার খালেকের ব্যক্তি ইমেজই এই নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ের পেছনের কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন শাহদীন মালিক।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে জয়ের পেছনে খালেকের ব্যক্তি ইমেজের ভূমিকাকে বড় কারণ মনে করছেন আরেক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহও। পাশাপাশি জয়ের পথে থাকার সময়ই খালেক গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকেও ইতিবাচক মনে করছেন তিনি।

ড. নাজমুল আহমান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘খালেক বলেছেন, তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হলে হেরে যাওয়া প্রার্থীর অঙ্গীকারগুলোকেও বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করবেন। তিনি আগের মেয়াদের মেয়রের অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলেছেন। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি উদার মনের পরিচয় দিয়েছেন।’

বড় ধরনের কোনো সহিংসতা না হওয়া এবং বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন না করাকে এই নির্বাচনের বড় অর্জন বলে মনে করছেন এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রবল সহিংসতার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে কাউকে প্রাণ হারাতে হয়নি। বড় ধরনের কোনো গোলোযোগও হয়নি। তাছাড়া এই নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে। এগুলো এই নির্বাচনের বড় সফলতা।’

নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাফল্যের ধারাবাহিকতা এই নির্বাচনেও বজায় ছিল বলে মনে করছেন ড. কলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি কর্মকর্তা মাঠে ছিলেন। তারা আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করেছেন বলে মনে হয়েছে। ইসি কর্মকর্তা ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মাঠে ছিলেন। সবাই মিলে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই এমন একটি নির্বাচন সম্ভব হয়েছে।’

খুলনা সিটি নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এটাকে এই নির্বাচন সফল হওয়া এবং সহিংসতা না হওয়ার পেছনের কারণ বলে মনে করছেন নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।

সারাবাংলা/এটি/টিআর

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন