বিজ্ঞাপন

বেপরোয়া ড্রাইভিং ও বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাতেই সড়ক দুর্ঘটনা!

May 16, 2018 | 2:12 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: চালকদের কাণ্ডজ্ঞানহীন ও বেপরোয়া বাস চালানো এবং দেশের বিশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনার কারণেই দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তবে এর সঙ্গে আরও রয়েছে কমবয়সী চালক, লাইসেন্সবিহীন চালক, মালিকদের রাজনৈতিক প্রভাব এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গী বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে শিথিলতা রয়েছে। যদি সঠিক আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায় তাহলে চালকরা বেপরোয়া হতে পারতেন না, মালিকপক্ষ তাদের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতেও ব্যর্থ হতেন। তাহলেই সড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আসতে বাধ্য, আর শৃঙ্খলা ফিরে এলেই দুর্ঘটনা কমে আসতে বাধ্য হতো বলেও মন্তব্য তাদের।

বুধবার (১৬ মে) বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে বাসের ধাক্কায় আব্দুল করিম (৩২) নামে একটি পিকআপ ভ্যানের চালক মারা গেছেন।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী একটি পিকআপ ভ্যান কোনাবাড়ী পৌঁছালে পেছন থেকে আসা নাবিল পরিবহনের একটি বাস পিকআপ ভ্যানটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে। এ সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান পিকআপ ভ্যানের চালক করিম। আহত হন অন্তত ৭ যাত্রী।

মঙ্গলবার ( ১৫ মে) রাজধানীর দয়াগঞ্জ রোডের মাথায় ট্রাক চাপায় কালু দাস (৫০) নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর হাত পা থেঁতলে গেছে। দুর্ঘটনার পর প্রথমে ঢামেক হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কালু দাসকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আহত কালুর ছোট ভাই সুনীল দাস বলেন, ‘পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন, কালুর ডান পা কেটে ফেলতে হবে এবং হাতের কব্জি থেকেও কেটে ফেলা লাগতে পারে।’

গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের চাপায় প্রথমে হাত হারিয়ে সরকারি তিতুমীর কালেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেন পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৭ এপ্রিল।

গত ২০ এপ্রিল রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় বাসচাপায় রোজিনা আক্তার প্রথমে পা হারান, পরে মারা যান ঢামেক হাসপাতালে। এর আটদিনের মাথায় পা হারান গাড়ি চালক রাসেল সরকার। হানিফ ফ্লাইওভাবে গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

গত ৪ মে পৃথক দুর্ঘটনায় শাওন নামের একজন মারা যান, আহত হন আরও ১৩ জন। গত ১০ মার্চ  গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও আহত হন ২০ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও পঙ্গুত্বের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ১৫০ জনের বেশি মানুষ। সমিতি বলছে, চলতি বছরের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজার সাতশ ৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে এক হাজার আটশ ৪১ জন, আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৭৭ জন এবং এর মধ্যে পঙ্গু হয়েছেন ২৮৮ জন। এদিকে, প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ভারি যানবাহনের চালকদের অসতর্কতা ও খামখেয়ালিপনার কারণে বলে জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারির অভাব রয়েছে বলেও জানিয়েছে কমিটি।

 

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, চালকদের বেপরোয়া ও কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণেই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। একইসঙ্গে ঢাকার রাস্তায় কিশোর বয়সী চালকরা বাস চালাচ্ছেন যাদের অধিকাংশেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।

তবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য গণপরিহন খাতের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা।

বাংলাদেশের পরিবহন খাত পৃথিবীতে সবচেয় উচ্ছৃঙ্খল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাস মালিক সমিতি ও সড়ক পরিহন শ্রমিক ইউনিয়নের দুই শীর্ষ নেতাই মন্ত্রী, যার ফলে বাস-ট্রাক মালিক ও শ্রমিকেরা প্রভাবশালী।’ মালিকদের কাছে সেবা ও নিরাপত্তার চেয়ে মুনাফা অর্জনই তাদের কাছে মুখ্য বলেও মন্তব্য তার।

‘সেফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্স’ এর সমন্বয়ক সদরুল হাসান মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বাস চালকদের বেপরোয়া মনোভাব দায়ী। তবে এর সঙ্গে আরও রয়েছে চালকদের দক্ষতার অভাব, সড়ক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি, ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, কম বয়সী চালক এবং সড়কের কৌশলগত ত্রুটির কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

সদরুল হাসান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশর সড়ক দুর্ঘটনার কমানোর জন্য মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একত্রিত হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। কারণ কারও একার পক্ষে এ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সড়কের সার্বিক কোনও শৃঙ্খলা রয়েছে বলে আমি মনে করি না। এই একটি খাতের পুরোটাই অব্যবস্থাপনার উদাহরণ। ট্রাফিক আইনের কোনো কার্যকর প্রয়োগও নেই। যার কারণে চালকদের হাতে চলে গেছে পুরো বিষয়টি, সঙ্গে রয়েছে তাদের মালিক পক্ষ আর রাজনৈতিক প্রভাব।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে শিথীলতা দেখতে পাই। যদি সঠিক আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায় তাহলে চালকরা বেপরোয়া হতে পারতেন না, মালিকপক্ষ তাদের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতেও ব্যর্থ হতেন। তাহলেই সড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আসতে বাধ্য, আর শৃঙ্খলা ফিরে এলেই দুর্ঘটনা কমে আসতে বাধ্য হতো-বলেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন