বিজ্ঞাপন

হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না— ছাত্র সমাজের উদ্দেশে ফখরুল

October 12, 2023 | 9:55 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্র সমাজের উদ্দেশে বলেছেন, মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। আপনারা যদি নিজেরা বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, আপনাদের বাবা-মা-ভাই-বোনকে বাঁচাতে চান তাহলে জেগে উঠতে হবে এবং ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে রাজপথে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টেবার) সন্ধ্যায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যে’র উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কনভেনশনে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

সরকার বাংলাদেশকে জাহান্নাম বানিয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘লড়াই করে, সংগ্রাম করে তাদের পরাজিত করতে হবে। দৃপ্ত শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং মুক্ত করতে হবে দেশকে ভয়াবহ দানবের হাত থেকে। আমরা আশাবাদী যে, এই যুবক-তরুণদের ঐক্যের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে এই দানব ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘটবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটা হচ্ছে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। যে ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে স্বপ্নগুলো ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। আপনজনকে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

বিজ্ঞাপন

ছাত্রদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমাদের সকলের জন্য লজ্জার। তোমাদের একজন নেতার (শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী) উপর একজন পুলিশ অফিসার বেআইনিভাবে হাত তুলে তাকে আহত করেছে। কোন অবস্থায় এ্যানীর মতো একজন সাহসী ছেলে আদালতে দাঁড়িয়ে বলে যে, চোর-ডাকাতকে মানুষ এভাবে মারে না, আমাকে তারা (পুলিশ) যেভাবে মেরেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি এবং সামনা-সামনি প্রতিবাদ করেছি। এখানে যেসব নেতারা বসে আছে তারা যুদ্ধ করেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ তৈরি করেছেন, স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছেন। আজকে আপনাদের (ছাত্র সমাজ) কাছে সেই গুরু দায়িত্ব এসেছে এই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন যে, এখন তরুণদের সব ক্ষোভ মোবাইল সেটে। স্ট্যাটাস দিলেই ক্ষোভ শেষ। ক্ষোভ মোবাইল সেটে দিলে শেষ হবে না। ক্ষোভ রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। আমার মাকে বন্দি রেখে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। আমার ভাইকে তারা মেরে আহত করছে, আমাদের ৬৪৮ জন ভাইকে গুম করে দিয়েছে, সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীকে তারা বিচারবর্হিভূতভাবে হত্যা করেছে। এই এক বছরে ২২ জন যুবনেতা, ছাত্রনেতা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোথায়? আপনাদের মধ্যে সেই বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন ‘উনারা (সরকার) খুব আনন্দে আছেন। আমেরিকায় ১৮দিন ঘুরে আসলেন, এখন ব্রাসেলস যাবেন। চতুর্দিকে ঘুরাঘুরি শুরু হয়েছে। এই ঘুরে ঘুরে যদি কোনো রকমে সামাল দেওয়া যায়, এই চেষ্টা করছেন। আমি বলতে চাই, আর ঘুরাঘুরি করে লাভ হবে না। চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। পরিসষ্কার করে বলতে চাই, এদেশের সকল মানুষ অতিষ্ট হয়ে গেছে। বাঁচতে চায় আপনাদের হাত থেকে। আপনাদের নির্যাতন-অত্যাচার-চুরি-দুর্নীতি— সবকিছু থেকে মানুষ এখন বাঁচতে চায়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পদ্মা সেতু বানিয়েছেন, আন্ডার গ্রাউন্ড টানেল বানিয়েছেন, উড়াল সেতু বানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে বানিয়েছেন, লোকজন তো আপনাকেই ভোট দেবে। তাহলে দেন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটা আপনি করবেন না। কারণ, আপনি জানেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠন নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যে’র আত্মপ্রকাশ হয়। সংগঠনগুলো হচ্ছে : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রলীগ(জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল(এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ(প্রধান), ছাত্র ফোরাম(গণফোরাম-মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ(কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্র সমাজ(বিজেপি-পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ(খন্দকার লুতফুর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।

জাতীয় ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছাত্র দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে এই কনভেনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাগপার একাংশের রাশেদ প্রধান, আরেক অংশের খন্দকার লুতফুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, এলডিপির নুরুল আলম, বিএনপির রাকিবুল ইসলাম বকুল, কবি আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের তারিকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের মশিউর রহমান খান রিচার্ড, ছাত্র লীগ(জেএসডি) তৌফিক উজ জামান পীরাচা, গণতান্ত্রিক ছাত্র দলের মেহেদি হাসান মাহবুব, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের মেহেদি হাসান মুন্না, জাতীয় ছাত্র সমাজের কাজী ফয়েজ আহমেদ, জাগপার ছাত্রলীগের আব্দুর রহমান ফারুকী,ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহম্মেদ শাকিল, ছাত্র জমিয়তের নিজাম উদ্দিন আল আদনান, জাতীয় ছাত্র সমাজ(পার্থ)সাইফুল ইসলাম, ছাত্র ফোরাম(গণফোরাম) সানজিদ রহমান শুভ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতির ফহিবুর রহমান মুনির, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহমেদ ইসহাক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শহীদুল ইসলাম রিয়াজ, নারী নেত্রী ছাত্র দলের মানসুরা আলম, ছাত্র ফেডারেশনের ফারহানা মানিক মুনা বক্তৃতা করেন।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন