বিজ্ঞাপন

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিদ্যালয়, অভিভাবকদের স্বস্তি

October 13, 2023 | 10:56 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: ২০২০ সালের ২৩ জুলাই জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ‘ব্যতিক্রমী’ একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীরঘেঁষা বৃহৎ এ প্রকল্পে বসবাসরত মানুষের জন্য ছিল সব ধরনের সুযোগ সুবিধা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু শিশুদের পাঠদানে কাছাকাছি ছিল না কোনো বিদ্যালয়। ফলে শিশুদের স্কুলযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আর এ বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার যেন অন্ত ছিল না। অবশেষে ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামের সেই প্রকল্প এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির নাম ‘খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নিদের্শনায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে এটিকে অস্থায়ী বিদ্যালয় হিসেবে চালু করা হয়েছে। এটি দেশের আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে চালু হওয়া প্রথম কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় শিশুরা পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অভিবাকরা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক জরিপের পর অল্প সংখ্যাক শিশুদের এনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এলাকাটিতে পরিচালিত জরিপে ভর্তি উপযোগী তিন শতাধিক শিশু পাওয়া গেছে। জরিপের আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। জরিপ কাজ শেষ হলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বিদ্যালয়টি চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী শাহাব উদ্দিনের মা রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বাচ্চাদের লেখাপড়া নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কেননা প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লেখাপড়া করা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদেরকে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছিলেন এবার হাতে কাছে বিদ্যালয় করে দিয়েছেন। আমাদের দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, তাদের আদি নিবাস কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল এলাকায়। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তারা ভিটে মাটি হারিয়ে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ায় সরকারি খাস জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিকমানে রূপান্তর করার কাজে তাদের আশ্রয়ে ঠিকানাও অধিগ্রহণ করে সরকার। পরে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকার তাদের মাথাগোঁজার ব্যবস্থা করে।

প্রকল্প এলাকায় বিদ্যালয় পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আব্দুর রহিমের মা বিলকিস আক্তার। তিনি বলেন, বাচ্চাটার স্কুল ছিল তিন কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন এত দূরে গিয়ে পড়াশোনা করাটা খুব কষ্টকর। বাচ্চাটাও যেতে চায় না। তবে এবার আর ঝামেলা নাই স্কুলটা দেখে আনন্দ লাগতেছে। ছেলেটাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছি এবার ও আরও মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।

বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ স্কুলের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন। এ উপলক্ষে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস স্কুলটিতে অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অস্থায়ীভাবে চালু হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) থেকে স্বল্প পরিসরে পাঠদান শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের ভিত্তিতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য তৈরি করা হয় বিশেষ এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করেন। যেখানে ১৯ টি ভবনে ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ছয় শতাধিক পরিবারের চার হাজার মানুষ। আশ্রয়ণ প্রকল্পে আরও ৬০টি ভবন নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সেখানে আরও কয়েক শত পরিবারের আড়াই থেকে ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় পাবেন।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশেপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। যে কারণে প্রকল্প এলাকায় আশ্রয় নেওয়া শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা অবহিত পর ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আাশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিদের্শনা দেন।

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কমিউনিটি ক্লিনিক করার জন্য দুই একর জমি খালি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারি সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রকল্প এলাকার সাইক্লোন সেন্টারটি অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া গেছে। ওই সাইক্লোন সেন্টারে অস্থায়ীভাবে চালু করা হল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। যেখানে ইতিমধ্যে ৫০ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। একজন প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচ জন পদায়ন করে বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয়েছে। জামালপুর থেকে বিদ্যালয়ের জন্য বেঞ্চসহ নানা উপকরণ আনা হয়েছে। এখানে আশ্রয়ন প্রকল্পের পরিবারের শিশু ছাড়াও আশে-পাশের এলাকার শিশুদের ডিসেম্বরে ভর্তি করানো হবে। খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু পূর্ণবাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি অস্থায়ীভাবে চালু হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবন নিমার্ণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে ছয় তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নিমার্ণের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবেন। এটি একটি দৃষ্টি নন্দন, আধুনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় হবে।

প্রসঙ্গত, খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকার কারণে যেখানে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সরকার চালু করে শিখন কেন্দ্র নামের ১০টি কেন্দ্র। সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা-স্কাসের অধীনে ওই সব কেন্দ্রে তিন শত শিশুকে পাঠদান করতো। আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার আশপাশের নিকটবর্তী এলাকায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দৃষ্টিগোচর হলে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন। পরে তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালুর আশ্বাস দেন।

সারাবাংলা/এনইউ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন