বিজ্ঞাপন

‘মুজিবে’ অভিভূত দর্শক, মণিহারে উপচে পড়া ভিড়

October 13, 2023 | 11:55 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: তৎকালীন পূর্ব-কিস্তানের এক অজপাড়া গাঁয়ের এক কিশোর মুজিব। সেই মুজিব ধীরে ধীরে হয়ে উঠল একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সেই মুজিবই নেতৃত্ব দিয়ে একটি দেশকে এনে দিলো স্বাধীনতা। অথচ সেই মুজিবকেই দেশের স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আততায়ীর হাতেই দিতে হয়েছিল প্রাণ।

বিজ্ঞাপন

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই জীবনালেখ্যর বিভিন্ন মুহূর্ত সিনেমা হলের পর্দায় দেখে কখনো শিহরিত হয়েছে দর্শক, কখনো আনন্দে হয়েছেন উচ্ছ্বসিত, কখনো বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন। শুক্রবার যশোরের মণিহার সিনেমা হলে দেখা গেল এমন দৃশ্য। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে তখন দর্শকদের লম্বা লাইন।

জাতির পিতার জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি একযোগে দেশের ১৫৩টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর)।

‘মুজিব’ সিনেমা ঘিরে দীর্ঘদিন পর মণিহারে দেখা গেছে দর্শকদের এমন ঢল। ছবি: মণিহার

যশোরের ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ মণিহারেও মুক্তি পেয়েছে ‘মুজিব’। আর সেই চলচ্চিত্র দেখতে এই সিনেমা হলটিতে দেখা গেছে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। প্রথম শো থেকেই জমজমাট ছিল সিনেমা হল প্রাঙ্গণ। তাদের অনেকেই সিনেমা দেখতে এসে বিস্মিতও হয়েছেন। বলছেন, সিনেমা হলে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় হতে পারে, এটি তাদের ধারণার বাইরে ছিল।

বিজ্ঞাপন

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার প্রথম শো যারা দেখেছেন, তারা মুগ্ধ হয়েছেন চলচ্চিত্রটি দেখে। বলছেন, সিনেমা হতে হবে এমনই। ঘটনা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাধীনতা ও সংগ্রাম, চেতনার উন্মেষ এবং বাস্তবতার অনুভূতি— সবকিছুর মিশেল ছিল এই সিনেমায়। সঙ্গে অভিনয় নৈপুণ্য, দৃশ্যায়ন এবং কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপেরও অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে সিনেমাটিতে। আর তাতেই জাতির পিতার জীবন মূর্ত হয়ে উঠেছে সিনেমার পর্দায়।

শুক্রবার সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে ওঠে মণিহার সিনেমা হল। সিনেমা দেখতে টিকিট কাটার জন্য লম্বা লাইন দেখা গেল দর্শকদের। সিনেমা শুরু হলে প্রেক্ষাগৃহের ভেতরে ছিল পিনপতন নীরবতা। খোদ সিনেমা হলের কর্মীদের কাছেই এ দৃশ্য খুব একটা পরিচিত নয়।

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক দেখার জন্য মণিহারে দর্শকদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছবি: মণিহার

মনিহার সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত শামীম আনোয়ার বলেন, এই সিনেমা নিয়ে সবার আগ্রহ থাকবে, এটি আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল। তারপরও সকাল থেকে যে পরিমাণ দর্শক আমরা হলে দেখেছি, এটি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। টিকিট কাউন্টারে এত চাপ এর আগে কবে দেখেছি, মনে পড়ে না।

বিজ্ঞাপন

সিনেমার শেষ দৃশ্যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের যখন এক এক করে হত্যা করা হয়, এবং সবার শেষে শিশু শেখ রাসেলকেও যখন বুকে গুলি চালানো হয়, তখন সিনেমা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনেকেই কেঁদে ফেলেন চিৎকার করে।

সিনেমা শেষ করে বাইরে দাঁড়ানোদের ভিড়ে ছিলেন শার্শা থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্রমজীবী রহমত আলী, নওয়াপাড়া থেকে আসা সুধীর, শহরের যুব মহিলা লীগের নেতা মিতা, বসুন্দিয়ার মেহেদী, নীলগঞ্জের সানজিদা, গৃহবধূ ফিরোজা, শিক্ষার্থী সাজিদ, চৌগাছার যুবক শামীম, সাইফুল, তিতলি, সাংবাদিক নেতা মনোতোষ বসু, সাজেদ বকুল, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাকসহ আরও অনেকেই।

সিনেমাটি প্রথম শো’তে দেখেন স্থানীয় একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া তাবাসসুম। তিনি বলেন, জাতির পিতার জীবন সিনেমার পর্দায় এভাবে দেখতে পাব, কখনো ভাবিনি। সিনেমাটি দেখে খুব ভালো লেগেছে। সুযোগ পেলে আবার দেখতে আসব।

মণিহারে চলছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। ছবি: মণিহার

দর্শকদের মতে, সিনেমার শুরুর দৃশ্যটিই ছিল মনোমুগ্ধকর। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে রয়েল এয়ার লাইনসের একটি উড়োজাহাজে করে দেশে ফিরছিলেন। জানালা দিয়ে দেখতে পান বাংলাদেশের অপরূপ রূপ। সেই দৃশ্য আর এই দেশ, এই মাটির প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে প্রেম, তার যুগলবন্দির সেই দৃশ্যটি সিনেমাটিতে শুরুতেই প্রাণের সঞ্চার করেছে। পাইপ টানতে টানতে বাঙালির প্রাণের মানুষটিকে যেভাবে পর্দায় উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটিকে রাজসিকই বললেন দর্শকরা। বললেন, উড়োজাহাজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখে হাতে দেশের মাটি নিয়ে যেভাবে বঙ্গবন্ধু চুম্বন করে কপালে ঠেকিয়েছেন, এ দৃশ্য তারা কখনো ভুলতে পারবেন না।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতি যুক্ত না থাকা অনেক দর্শকই জানিয়েছেন, সিনেমায় মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খন্দকার মোশতাক, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামের উপস্থিতি সিনেমাটিতে ঋদ্ধ করেছে। পাশাপাশি একাত্তরের বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র থেকে নেওয়া শরণার্থী শিবিরের দৃশ্য কিংবা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকারের দৃশ্যটি সিনেমাটিকে আরও বাস্তবমুখী ও দৃঢ়তা দিয়েছে।

স্কুলের শিক্ষক রাহিতুল ইসলাম বলেন, এই সিনেমাটি প্রত্যেকের দেখা উচিত। এরকম সিনেমা আরও অনেক বেশি বেশি তৈরি হওয়া উচিত। তাহলে মানুষ ইতিহাসের কথা জানতে পারবে।

তার মতো অন্য দর্শকরাও বললেন, জাতির পিতার জীবন সংগ্রামকে একটি চলচ্চিত্রে তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। তারপরও মুজিব সিনেমাটি তার সেই সংগ্রাম ও আন্দোলনমুখর জীবনকে বড়পর্দায় অনেকটাই তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এই সিনেমাটি বঙ্গবন্ধুকে জানতে সহায়তা করবে, ইতিহাস জানতে সহায়তা করবে। তাই দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই উচিত সিনেমাটি দেখা। ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিতে এরকম আরও আরও চলচ্চিত্র তৈরি করার তাগিদ দিলেন তারা।

আলোচিত এই চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেসার একটি বয়সের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একটি বয়সের চরিত্রে নুসরাত ফারিয়াসহ শতাধক শিল্পী অভিনয় করেছেন এই চলচ্চিত্রে।

২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে মুম্বাইয়ের দাদা সাহেব ফালকে স্টুডিওতে সিনেমাটির প্রথম ধাপের শুটিং শুরু হয়। চলচ্চিত্রটির সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন দয়াল নিহালানি। চিত্রনাট্য লিখেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়েদি। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন নীতিশ রায়। কস্টিউম ডিরেক্টর শ্যাম বেনেগালের মেয়ে পিয়া বেনেগাল।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন