বিজ্ঞাপন

চসিককে ‘ঝাড়লেন’ মন্ত্রী তাজুল

October 14, 2023 | 8:55 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা মোকাবিলা ও রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে চসিক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সমন্বয় সভায় মন্ত্রী প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ চসিকের কর্মকর্তাদের সামনেই মন্ত্রী অসন্তোষ তুলে ধরেন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ করে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নেই। করপোরেশনের তৎপরতা কী? সিটি করপোরেশন ঠিকভাবে কাজ করছে না বলে আমার কাছে অভিযোগ আছে। এখনই যদি সতর্ক না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। শুধু মশা মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ঠিকভাবে না হলে কষ্ট পাই। কাজের মান গুণগত না হলে, মানুষের কল্যাণে না হলে কষ্ট পাব। মানুষের জন্য আমাদের করার অনেক কিছু আছে। কিন্তু যথাযথ সেবা দেওয়া হবে না। নালা করব, কিন্তু সেটা টেকসই হবে না, মানুষের কাজে আসবে না। তাই জনগণের জন্য কাজ করার সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যাতে টেকসই হয়।’

বিজ্ঞাপন

জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো সমীক্ষা আছে কি না জানতে চেয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এত টাকা ব্যয় করার পরেও কেন জলাবদ্ধতা হবে। এটা আমাকে যন্ত্রণা দেয়। বারবার দগ্ধ হয়। কী কাজ হচ্ছে তার আউটপুট চাই। শুধু মিটিং করলাম, রেজুলেশন করলাম। এগুলো শুনতে শুনতে বিরক্ত। জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো স্টাডি বা সমীক্ষা আছে কি আপনাদের?’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার দুই মেয়র নিজেরাই অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ করেছে জলাবদ্ধতা নিয়ে। অনেকগুলো খাল খনন করেছে। এখন আর সাত আট দিন পানি জমে থাকে না। দুই তিন ঘণ্টা পর নেমে যায়। দুই মেয়রকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে দুই মেয়র কাজ করেছেন।’

চসিকের রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের হিসেব চেয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন রাজস্ব আদায় করে। এই টাকায় কোথায় ব্যয় করে। উদ্যানে কোনো ধরনের দোকান বসানো যাবে না। উদ্যানে যা খুশি তাই করতে পারবেন না। কোনো কিছু করতে চাইলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন। এরপর মন্ত্রণালয় যাচাই–বাছাই করে অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রীর এসব বক্তব্যের জবাবে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চসিকের যে রাজস্ব আয় তা থেকে ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫৬টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অনেকগুলো জনসেবার প্রকল্প পরিচালনা করছে। এগুলো পরিচালনার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে চসিকের উপর চাপ তৈরি হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের রাজস্ব দিয়ে খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। চাক্তাই খালের তলা পাকাকরণসহ খাল খননের সব কাজ করা হয়েছে প্রকল্পের মাধ্যমে।’

মেয়র বলেন, ‘শুধু রাজস্ব দিয়ে নালা–নর্দমা খননের কাজ করা হয়েছে। ঢাকায় সব বড় বড় দালান আর সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই সেখানে রাজস্ব আদায়ে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু চট্টগ্রামে ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি থেকে গৃহকর আদায় করা যায়। বাকিগুলোর আর্থিকভাবে অবস্থা ভালো না।’

মেয়র আরও বলেন, ‘যে সমস্ত খালে তারা দেয়াল দিয়েছে, বিশেষ করে চাক্তাই খাল, মহেশ খাল, মির্জাখাল, নোয়াখাল, এসব খালে যদি মাটি উত্তোলনই করা হয়ে থাকে তাহলে সেটা দৃশ্যমান না কেনো। কোনো মাটিই উত্তোলন করা হয়নি। মাটি উত্তোলনই যদি করা না হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কেনোই বা সেগুলো বুঝে নেবে। আমাদের মাটি উত্তোলন করে দেন। সাইড দেয়ালের দরকার নেই। মাটির কারণেই খালগুলো দিয়ে পানি যেতে পারে না।’

সভায় উপস্থিত দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনী জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘খালগুলোতে মাটি জমে উঁচু হয়ে আছে। আমার এলাকায় শেষ ২০১৮ সালে খালগুলোতে মাটি খননের জন্য কাজ করতে দেখেছি। বৃষ্টি হলে তাই খালগুলোতে পানি যেতে পারে না। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী কোনো ভবন তৈরি করতে গেলে সামনে ছয় ফুট রাস্তার জন্য জায়গা রাখতে হয়। কিন্তু দেখা যায় ভবন মালিকরা চার ফুটও জায়গা রাখে না। সিডিএ কি এসব বিষয়ে জানে না। তাদের কাছে গিয়ে কাগজ চাইলে তারা দিতে চায় না। এ রকম অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আগে খালগুলো নিজেরাই রক্ষণাবেক্ষণ করত। নিজস্ব অর্থ ও জনবল দিয়ে খালগুলো নিয়মিত খনন করা হতো। আগে এভাবেই কাজ করা হত। তখন কোনো প্রকল্প নেওয়া হতো না। এখন সবাই প্রকল্পপ্রিয় হয়ে গেছে। তাদের মনোভাব এমন প্রকল্প ছাড়া কাজ হবে না। অথচ নিজস্ব আয় দিয়েই করা যেতে পারে।’

সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘২০১৬ সালে এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এই মহাপরিকল্পনা সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প নিয়েছে সিডিএ। এই মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হলে জলাবদ্ধতা অনেক কমে যাবে।’

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টিতে কাজ করছে সিডিএ। তাই সেখানে কাজ করার সুযোগ নেই সিটি করপোরেশনের। আর বাকি ২১টি খাল নিয়ে সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প নিচ্ছে।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. ইব্রাহিম, অতিরিক্ত সচিব মলয় চৌধুরী ও মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতার হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা, চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস এবং ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন