বিজ্ঞাপন

কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, অধ্যক্ষকে তুলে নিয়ে গেলেন এমপির অনুসারীরা

October 16, 2023 | 8:15 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার একটি মাদরাসার কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে অধ্যক্ষকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ মাদরাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিড়ালদহ বাজারে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেন। এরপর অধ্যক্ষকেও ফিরিয়ে দিয়ে যায় পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টার রাজশাহীর পুঠিয়ার বিড়ালদহ এসকেডিএস ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে মাদরাসা থেকে তুলে নিয়ে যান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা। অধ্যক্ষ নিজেও তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে ডা. মনসুর বলছেন, তিনি ডাকলে অধ্যক্ষ নিজেই গিয়েছিলেন তার কাছে।

মাদরাসার শিক্ষকরা জানান, কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বিড়ালদহ এলাকার সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মঈন, শফিকসহ কয়েকজন মিলে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে মাদরাসায় যান। গাড়ি থেকে তিন-চারজন বেরিয়ে অধ্যক্ষের রুমে চলে যান। সেখান থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে তাদের গাড়িতে করে নিয়ে যান।

এ ঘটনার পর মাদরাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী বিড়ালদহ এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা ধরে অবরোধের ফলে রাস্তার দুপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুঠিয়া থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে উদ্ধারের আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা সড়ক ছেড়ে দেন। ঘণ্টা তিনেক পর অধ্যক্ষকে মাদরাসায় দিয়ে যায় পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

বিড়ালদহ এসকেডিএস ফাজিল মাদরাসার সভাপতি দেওয়ান আবদুস সালেক বলেন, ‘বর্তমান এমপির অনুসারী স্থানীয় সন্ত্রাসী মঈন, শফিকসহ বেশ কয়েকজন ক্লাস চলাকালীন একটি কালো রঙের গাড়িতে এসে অধ্যক্ষকে তুলে নিয়ে যায়। অধ্যক্ষকে তারা লাঞ্ছিত করেছে। মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তারপর বিষয়টি সবার নজরে আসে। এরপর তারা অধ্যক্ষকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে আমরা তাকে রাজশাহী মহারগরীল কাশিয়াডাঙা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’

এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে আবদুস সালেক বলেন, ‘আমরা স্যারকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। অভিযোগের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ করা হবে।’

উদ্ধার হওয়ার পর অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে আমাকে লাঞ্ছিত করেছে তারা। অপরহণ করে নিয়ে গেছে। আন্দোলন দেখে ওসিকে ডেকে বলেছেন আন্দোলন বন্ধ করতে। ওসি আমাকে ছেড়ে দিতে বলেছেন। এর তিন ঘণ্টা পর তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।’

বিজ্ঞাপন

কীসের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হলো— জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হাবিবুর বলেন, ‘এমপি ডা. মনসুর রহমান আমাকে দেখা করতে বলেছিলেন। দেখা করব বলেছিলাম। আজ রাতে তার সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। কিন্তু আগেই আমাকে সবার সামনে মারধর করে তুলে নিয়ে গেছে এমপির লোকজনরা। তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করছে। আমি সুবিচার চাই। এমপি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান বলেন, ‘আমি ওই শিক্ষককে কয়েকদিন থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলে আসছি। ওই মাদরাসার কমিটি নিয়ে ভেজাল চলছে। তিনি আমার লোককে বাদ দিয়ে সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারার লোককে কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছিল।’

এমপি ডা. মনসুর আরও বলেন, ‘উনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। এসেছিলেনও। আমি তাকে বললাম, কমিটি করে লাভ কী? বেতনগুলো সই হলেই তো হলো। আপনার চিন্তার কারণ নেই। আমি সমঝোতা করে দিচ্ছি। তিনি আমার এখান থেকে মিষ্টি ও চা খেয়ে বিদায় নিয়েছেন। এটি অপরহণ নয়। অপরহণ করা হয়নি। তিনি তার ইচ্ছামতো চলে গেছেন।’

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই আসনের সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘এসকেডিএস ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধও করা হয়েছে বলে জেনেছি। আমার কোনো লোককে সভাপতি করা হয়নি। আমি কাউকে চিনিও না, জানিও না। ডা. মনসুর সাহেব ওই আসনের এমপি। তিনি তার ইচ্ছামতো সভাপতি দেবেন, এটাই স্বাভাবিক।’

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, ‘মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বাড়িতে আছেন। তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। অপরহণ কি না, সেটি আমার তদন্ত করে বলতে পারব।’

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন