বিজ্ঞাপন

ভবন ১০ তলা, নোবিপ্রবি’র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিফট থাকে ৯৬ তলায়

October 17, 2023 | 9:19 am

রিয়াদুল ইসলাম, নোবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট:

নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) দশ তলা একাডেমিক ভবন-২ এ ২টি লিফট স্থাপিত থাকলেও প্রায় তিনমাস একটি পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। চালু থাকা অন্য লিফটেও ত্রুটির শেষ নেই। ফলে ভবনে ক্লাস করা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে ওঠা-নামা করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দশতলা একাডেমিক-২ ভবনের চালু থাকা লিফটে চড়লে লিফটের ডিসপ্লেতে কখনও ১২ আবার কখনও ৯৬ তলায় অবস্থান দেখায়। এছাড়া, লিফট চলন্ত অবস্থায় মাঝে মাঝে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। বাকি লিফটটি প্রায় তিন মাস ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একমাত্র লিফটই ব্যবহার করতে হয় সবাইকে।

ভবন সূত্রে জানা যায়, ‘একাডেমিক ভবন-২’ এর প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ। এছাড়া ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম তলায় রয়েছে যথাক্রমে এপ্লাইড ম্যাথ বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ ও ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স বিভাগ।

৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম তলায় যথাক্রমে এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইকোনমিকস বিভাগ ও এগ্রিকালচার বিভাগ একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিজ্ঞাপন

স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ সবমিলে ৪৫ ব্যাচের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে এই ভবনের ২য় তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন। এছাড়াও এসব বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াত রয়েছে ভবনটিতে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, একটি লিফট নষ্ট থাকায় অন্য একটিতেই এই ভবনের সবার যাতায়াত। সেটিও হুটহাট আটকে যায়। এই লিফটের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১৪ জন হওয়ায় সিঁড়ি বেয়েই অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১০ তলা পর্যন্ত উঠানামা করতে হয়। আবার ১০ তলা ভবন হলেও ১২ ও ৯৬ তলায় অবস্থান দেখানোর কারণে লিফটের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায় না।

বিজ্ঞাপন

তারা আরও জানায়, পঞ্চম থেকে দশম তলায় থাকা বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক বেশি কষ্ট করতে হয়।

কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান বলেন, ‘একটি লিফট তিন মাস ধরে নষ্ট, আবার চালু থাকা লিফটটি প্রায় সময়ই শিক্ষার্থীসহ আটকে যায়। যা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করে আমাদের মাঝে। প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও লিফটের সমস্যা ঠিক করা হয়নি।’

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিনা আফরিন বলেন, ‘একটা লিফট নষ্ট হওয়ায় বাকি একটা লিফটে জায়গা পাওয়া যায় না বললেই চলে। বেশিরভাগ সময় সিঁড়ি ব্যাবহার করে উপরে যাওয়া কষ্টসাধ্য।’

সামিয়া জাহান দিপ্তি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘লিফটজনিত সমস্যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই বিড়ম্বনার। এমনিতেও শিক্ষার্থীর তুলনায় লিফটের সংখ্যা কম, অপরদিকে লিফটে উঠলেই আতঙ্কে থাকতে হয়।’

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নষ্ট থাকা লিফটের সমস্যা সমাধানে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট জমা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটিতে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আশিককে আহ্বায়ক, প্রকৌশলী শরীফকে সদস্য সচিব ও ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান সুব্রত পালকে সদস্য করা হয়।

কমিটি তদন্ত শেষে প্রায় দেড়মাস আগে রিপোর্ট জমা দিলেও লিফটের ত্রুটির সমাধান এখনও হয়নি।


কমিটি সূত্রে জানা যায়, লিফটের সমস্যা স্থায়ী ভাবে সমাধান করার জন্য লিফট এর কন্ট্রোল প্যানেল এবং মোটর পরিবর্তন করতে হবে, এই পরিবর্তনে কয়েক লাখ টাকা প্রয়োজন। এছাড়া বিকল্প উপায় হচ্ছে, একের পর এক মেরামতের চেষ্টা করা, তবে এতে কার্যকর ফলাফল পাওয়া দুষ্কর।

তদন্ত কমিটি আরও জানায়, নষ্ট থাকা লিফটটি একটি নিম্নমানের কার্গো লিফট। যার জন্য কিছু দিন পর পর এটি বিকল হয়ে যায়। লিফটের সমস্যা স্থায়ী ভাবে সমাধান করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে ৩য় আরেকটি লিফট স্থাপন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘লিফটের ত্রুটি ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কাজ চলছে।‘

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম বলেন, ‘লিফটের সমস্যা সমাধানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ভবনের লিফটগুলো অনেক পুরোনো কার্গো (পণ্যবাহী) লিফট হওয়ায় যন্ত্রাংশ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। দ্রুতই এর সমাধান হয়ে যাবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন