বিজ্ঞাপন

রাজশাহীতে ডেঙ্গুর হটস্পট চারঘাট ও বাঘা

October 18, 2023 | 2:36 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলা ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছে। এই দুই উপজেলা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে শতকরা ৬০ জন রোগী। মারাও গেছেন কয়েকজন। চারঘাটে ২০ যায়গায় পরীক্ষা করা হয়েছে এডিস মশার লার্ভার। ১৫টি স্থানে পাওয়া গেছে ঘনত্ব।

বিজ্ঞাপন

চারঘাট পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নে গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা করা হয়। জেলার মধ্যে এডিসের লার্ভার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে কীটত্ত্ববিদরা।

এডিশ মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বেড়ে যায়। সদর ইউনিয়নের মুংলি গ্রামে বিআইর পরিমাণ হলো ৮০।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) পর্যন্ত চারঘাটের রোগী ভর্তি ছিলেন ৬২ জন। আর বাঘার ছিলেন ৪৭ জন। তারা সবাই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে চারঘাটের মারা গেছেন সাতজন রোগী। পাঁচজনের বাড়িই উপজেলার মুংলি গ্রামে। হাসপাতালে চারঘাটের রোগী মারা যায় ৮ জুলাই। এরপর থেকে রোগী বাড়তে থাকে।

বিজ্ঞাপন

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৪৬ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৯ জন। শয্যা সঙ্কট ও রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

জেলা কীটতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে একটি টিম পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের মুংলি গ্রাম থেকে এডিশ মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এসব এলাকার দইয়ের পাত্র, মাটির পাত্র, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের কভার, ফুলের টবে লার্ভা ও এডিশ মশা পাওয়া গেছে। ২০টি জায়গা পরীক্ষা করে পৌরসভা চত্বর, ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ ১৫টি জায়গাতেই এডিস মশা লার্ভা মিলেছে।

জেলা কীটতত্ত্ববিদ তায়েজুল ইসলাম বলেন, গ্রামাঞ্চলে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব দেখে আমরা অবাক হয়েছি। মুংলি গ্রাম ও পৌরসভা সদরে জীবিত এডিস মশাও পাওয়া গেছে। পুরো উপজেলা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলাজুড়েই এ মশা ছড়িয়ে পড়েছে। কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এ পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত হলেও চারঘাট পৌরসভা সদরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ, সবজি বাজার, সরদহ বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ও পাত্রে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। উপজেলার এসব এলাকায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন মানুষ। তারা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পেতে ভোগান্তির কথাও জানিয়েছেন। অনেকে জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতালে যাচ্ছেন না।

মুংলি বাজার এলাকার ভ্যানচালক মকবুল আলী বলেন, বাড়ি ও এলাকার সবার জ্বর। এলাকায় যারই পরীক্ষা করা হচ্ছে, তারই ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। হাসপাতালে গেলে পরীক্ষা করতে অনেক খরচ। তাই জ্বরের ওষুধ কিনে খাচ্ছি আর আতঙ্কে দিন পার করছি।

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট আছে। তবে প্লাটিলেট মাপার ‘সেল কাউন্টার মেশিন’ হাসপাতালে নেই। এ জন্য রোগীদের বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।’

বাঘার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন কমে এসেছে। যাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে আমরা রামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমাদের এখান থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, ‘জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু নিয়েও সচেতন হতে হবে। শীত আসতে আসতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে। দুই উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদেরসহ পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পরামর্শও দিচ্ছি।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফএমএ শামীম আহমেদ বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি রোগী চারঘাট ও বাঘার। এরপর পুঠিয়ার রোগী আছে। এছাড়া পবা, মোহনপুর, মহানগর ছাড়াও মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ নওগাঁর রোগী আছে। সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে চিকিৎসা দেওয়ার।’

তিনি জানান, গত মঙ্গলবার রামেক হাসপাতালে ১৮০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি আছেন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৬৯ জন। সুস্থ হয়ে হয়েছেন ৬৩ জন।

রামেক হাসপাতালে এবছর বছর চিকিৎসা নিয়েছে ৩ হাজার ৩১ জন। এদের মধ্যে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১১ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৮৩৫ জন। মারা গেছেন ১৬ জন।

সারাবাংলা/এমই/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন