বিজ্ঞাপন

সিজারে গজ রেখে সেলাই, ইনফেকশনে কেটে ফেলা হলো জরায়ু

October 19, 2023 | 10:20 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ‘হেলথ কেয়ার’ নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিজারে গজ রেখে সেলাই করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই একটি ভুলে রোগী হাসিনা এখন মৃত্যুপথযাত্রী।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ওই হাসপাতালে সিজারে নবজাতক জন্ম দেওয়ার পর ভিতরে মপ (গজকাপড়) রেখে সেলাই করেন চিকিৎসক। প্রায় তিন মাস পর আল্টাসনোগ্রাফিতে ধরা পরায় রোগীর জরায়ু ও ফেলোপিয়ান টিউব (বাচ্চা থাকার থলে) কেটে ফেলতে হয় চিকিৎসকদের। তারপরও সুস্থ্য হননি হাসিনা। ক্রমশ শারীরিক অবনতি তার জীবন শঙ্কার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে দিশেহারা হাসিনার পরিবার। তারপরও নির্বিকার অস্ত্রপ্রচার (সিজার) করা গাইনি চিকিৎসক ডা. রুপা আক্তার ও হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ! এখন পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। তবে সিভিল সার্জন বলেছেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১৭ জুন ত্রিশালের আউটিয়াল গ্রামের রিকশাচালক আনিসুরের রহমানের স্ত্রী হাসিনা র(৩৫) প্রসব ব্যাথা উঠলে নগরীর চরপাড়া হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার সিজার করা হয়। সেখানে সিজার ও ডাক্তার সেবার সব খরচ দেন আনিসুর রহমান। ওইদিন সন্ধ্যায় অস্ত্রপ্রচার (সিজার) করেন গাইনি চিকিৎসক ডা. রুপা আক্তার। হাসিনা ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। সিজারের পর নবজাতক ও মা দু’জনই সুস্থ ছিলেন। তিন দিন পর ছাড়পত্র দিলে বাড়ি চলে যান। এরপর স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে ড্রেসিং করানো হয়। কিন্তু ক্ষত জায়গা কোনোভাবেই ভালো হচ্ছিল না। দিনদিন পেট ব্যাথা তীব্র হতে থাকে। গত ২১ জুলাই হাসিনা তলপেটে ব্যথা নিয়ে কমিনিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার উন্নতি না হলে ১৪ দিন পর সেখান থেকে ছাড়পত্র দিলে বাড়ি চলে যান।

হাসিনার স্বামী আনিসুর রহমান জানান, ১৪ আগস্ট তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হাসিনাকে। ভর্তির পর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে বলেন। ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে চিকিৎসকরা দেখতে পান, হাসিনার জরায়ুতে গজের মত কিছু একটা রয়েছে। ফলে ভেতরে ইনফেকশন হয়ে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে হবে বলে জানান চিকিৎসকরা। ১৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। রোগীকে বাঁচাতে অপারেশন করার পর চিকিৎসকরা কেটে ফেলে জরায়ু, ফেলোপিয়ান টিউব।

বিজ্ঞাপন

১০ শয্যার অনুমোদনে দেড় বছর ধরে চলা হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের ম্যানেজার মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘আমাদের কাজ রোগী ও ডাক্তারের সমন্বয় করা। অপারেশনে কী সমস্যা হলো সেটি আমাদের বিষয় নয়। তবে কোনো বড় সমস্যা হলে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে দিতে পারি। এটি নতুন কিছু নয়, এমন তো হয়েই থাকে।’

হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে অস্ত্রপ্রচার (সিজার) করা গাইনি চিকিৎসক রুপার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে কথা বলবেন বলে আর বলেননি। তার মুঠোফেনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও কোনো উত্তর আসেনি। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি জানিয়েছেন, তার স্বামী এ বিষয়ে কথা বলবেন। ডা. রুপার স্বামী আরাফাত বলেন, ‘এমন ভুল অনেক হয়। রির্পোট লিখে কোন কাজ হবে না। হয়েছে কারও? শুধু শুধুই আপনাদের যন্ত্রণা! রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘ওই চিকিৎসক ভুলে এ কাজ করেছে। সেই ভুলের মাশুল দিতে হলো রোগী হাসিনাকে। তার জরায়ু ও ফেলোপিয়ান টিউব কেটে ফেলতে হয়েছে। এছাড়াও পায়খানার রাস্তায় বাইপাস করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রোগী কিছুটা সুস্থ হলেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবেন বলে জানান হাসিনার ভাই গার্মেন্টসকর্মী মো. সুরুজ্জামান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গরুকাটার মতো সিজার করেছে! তাদের কোনো দায়িত্ববোধ ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কোন ডাক্তার দিয়ে সিজার করাবে সেটা তো তাদের দায়িত্ব।’ সত্যিই কি তিনি ডাক্তার ছিলেন? এমন প্রশ্ন তুলে সুরুজ্জামান আরও বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর ঠিকই সব সমস্যা ধরা পড়েছে। অস্ত্রপচার করতেই ধরা পড়ল গজ রয়েছে। আমরা যোগাযোগ করে হেলথ কেয়ার থেকে সাড়া পাইনি। চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আমরা সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন