বিজ্ঞাপন

রাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা পদবঞ্চিতদের

October 22, 2023 | 5:15 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধযুগ পর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে নেতৃত্বে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তবে কমিটি ঘোষণার পরই রাবিতে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। পদবঞ্চিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সদ্যঘোষিত কমিটিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ অক্টোবর) রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আগামী এক বছরের জন্য রাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন। রোববার (২২ অক্টোবর) কমিটির বিষয়টি জানাজানি হয় ক্যাম্পাসজুড়ে। এরপরই শুরু হয় উত্তেজনা।

রোববার সকাল ১০টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সদ্যঘোষিত কমিটিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন তারা। কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা না করা পর্যন্ত বর্তমান কমিটির নেতারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে পারবে না বলেও জানান।

পরে দলীয় টেন্ট থেকে ক্যাম্পাসে শোডাউন বের করেন নেতাকর্মীরা। শোডাউন শেষে শনিবার রাতে ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের হল মাদারবক্স হলে গিয়ে তার কক্ষে ভাঙচুর করেন। পরে পরিবহন মার্কেটে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর এবং তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।

বিজ্ঞাপন

পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রাবির সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ‘ড্রপআউট’ শিক্ষার্থী আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এ ছাড়াও ৩৯ সদস্যের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে ‘বিতর্কিত’ নেতারা জায়গা পেয়েছেন।

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর রাবি ছাত্রলীগের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর একমাসেরও বেশি সময় পর শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হয় শনিবার রাতে। কমিটি ঘোষণায় দীর্ঘ সময় নেওয়ায় সবার প্রত্যাশা ছিল, ‘বিতর্কিত’ কেউ যেন কমিটিতে স্থান না পায়, সেটি যাচাই-বাছাইয়েই এত সময় নেওয়া হয়েছে। সেই প্রত্যাশায় ‘গুড়ে বালি’ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাদ্দাম-ইনানের নেতৃত্বকে একটু অন্যরকম ভেবেছিলেন। কিন্তু ছা্ত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতা তাদের সেই প্রত্যাশ্যা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার রাতে ঘোষিত কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন গত কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। ক্যাম্পাসে গুঞ্জন ছিল, তিনি এই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য সিভি দিয়েছিলেন। বাবু গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৮ সালে স্নাতক ও পরের বছর স্নাতকোত্তর শেষ করেন। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও কমিটি হওয়ার গুঞ্জন উঠলে তিনি ফিরে আসেন। ফিরে এসেই ছাত্রত্ব ধরে রাখতে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের শর্ট কোর্সে।

রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের হলের কক্ষ ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সারাবাংলা

নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব গত কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০১৪-১৫ সেশনে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রথম বর্ষে কৃতকার্য হয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উঠলেও গালিব দ্বিতীয় বর্ষ আর টপকাতে পারেননি। অ্যাকাডেমিক জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ‘ড্রপ আউট’ হন গালিব। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রত্ব দেখাতে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাসের ‘ভুয়া’ সনদ দেখিয়ে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে গত বছর তথা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে। এ ছাড়াও অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়ে অবৈধভাবে হলে থাকছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করে আসছি। এত দিন রাজনীতি করে আসার ফল হিসেবে এই পেলাম! একজন ইন্টার পাস শিক্ষার্থী, যে কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিই পার করতে পারেনি, তাকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে হবে? তাছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় খবর দেখেছি, নেতা নকল সনদ ব্যবহার করে সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি হয়েছে। তারপরও তাকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে হবে! সাদ্দাম-ইনানের কাছে এটা প্রত্যাশা করিনি। এখন দেখছি ‘যেই লাউ সেই কদু’।

পদবঞ্চিত একাধিক নেতাকর্মীর দাবি, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র না মেনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ রাবি ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, বিবাহিত ও অছাত্ররা কমিটিতে আসতে পারবে না। কিন্তু যাদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তারা দুজনেই বিতর্কিত। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে সক্রিয় ছিলেন না কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। পড়ালেখা শেষ করে সেলুনসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ড্রপআউট’ সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের বিয়ের ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব ‘বিতর্কিত’দের জায়গা দেওয়ার কারণেই পদবঞ্চিতরা কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

সদ্যঘোষিত কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডনও বলেন, বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত। অছাত্র, ইন্টার পাস ও বিতর্কিতদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। সভাপতি বাবু ছয় মাস আগে রাজনীতিতে এসেছে, নেতা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব বিবাহিত, ইন্টার পাস ও বিতর্কিত। রাজাকারের নাতিও এই কমিটিতে আছে। আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা আসতে পারবে না।

পদবঞ্চিত রাবি ছাত্রলীগ নেতা নেতা ও গত কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, ৩৪ দিন যাচাই-বাছাই করে যে কমিটি দিয়েছে তা মেনে নেওয়ার মতো না। সব পদে বিতর্কিতদের বসানো হয়েছে। সম্মেলন হওয়ার দুই দিন আগেও বাবু প্রার্থী ছিল না। সে সেলুনে চুল কাটার ব্যবসা করত। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব ইন্টার পাস। তিন-চার বছর পড়ালেখা করে পাস করতে পারেনি। সে বিয়েও করেছে। তার পরিবারের আটজন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত। গত কমিটিতে যে সহসভাপতি, এখন সাত বছর পর সে আবার সহসভাপতি! এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই কমিটি হাস্যকর। আমাদের সঙ্গে রসিকতা করা হয়েছে। তারা সংগঠন শেষ করে দিয়েছে। আমরা এই সম্পূর্ণ কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।

সদ্যঘোষিত কমিটির সহসভাপতি তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, গত নভেম্বরে সম্মেলন হলে বাবু সেখানে প্রার্থীই ছিল না। কিছুদিন আগে সে রাজনীতিতে এসেছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব অছাত্র, বিতর্কিত। এই কমিটিতে পিএইচডি-এমফিল শিক্ষার্থীরা আছেন। তাদের নেতা কীভাবে ইন্টার পাস হয়?

জানতে চাইলে নবগঠিত কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহীর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নেতা খায়রুজ্জামান লিটন চিন্তাভাবনা করেই এ কমিটি দিয়েছেন। যারা এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছেন, তাদের সবার ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সপ্তাহ না পেরোতেই আরেক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি পদে ২২ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৭২ জনসহ রাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য ৯৪ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন।

এর আগে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বরের ২৫তম সম্মেলনের মাধ্যমে রাবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে গোলাম কিবরিয়া সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন