বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে নিরুত্তাপ হরতাল, রাস্তায় নেই বিএনপি-জামায়াত

October 29, 2023 | 1:58 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল কোনো ধরনের উত্তাপ ছড়াতে পারেনি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। রাস্তায় দেখা মিলছে না নেতাকর্মীদের। পিকেটারহীন নগরীতে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন তুলনামূলকভাবে কম চলছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ আছে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নগরীর বাটালি রোডের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ডের পর দলটি রোববার ভোর ৬টা থেকে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। তবে একইদিন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করলেও রাতে বিবৃতি দিয়ে জামায়াতও হরতাল আহ্বান করে।

রোববার সকালে নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। আগের হরতালের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের নাসিমন ভবনের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যেত। এবার কার্যালয়ে ছিল সুনসান নীরবতা। নেতাকর্মীদের কেউ সেখানে আসেননি।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দিয়েই রিকশা, অটোরিকশা, বাস, প্রাইভেট কার চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে আশপাশের দোকানপাটগুলো সকালে বন্ধ দেখা গেছে।

এদিকে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা, টেম্পু, হিউম্যান হলার চলাচল স্বাভাবিক আছে। বাসসহ অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন সকালে কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন তুলনামূলক কম দেখা গেছে। ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী পরিবহন সকালে চোখে পড়েনি। বেলা বাড়তেই পণ্যবাহী পরিবহনও বের হতে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর দামপাড়া ও অলঙ্কার মোড়ে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ দেখা গেছে। শাহ আমানত সেতু এলাকায়ও কক্সবাজার ও বান্দরবানের বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কার্যত যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সীতাকুণ্ড-মীরসরাইয়ের যাত্রীদেরও আটকে যেতে হয়েছে একে খান মোড়ে।

তবে মহাসড়কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী বাস, মাইক্রোবাস নির্বিঘ্নে চলাচল করতে দেখা গেছে। বিএসআরএম কারখানার বার আউলিয়া ইউনিটের উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এস এম আবু ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক নিয়মেই মাইক্রোবাসে করে শহর থেকে অফিসে এসেছি। পথে কোনো সমস্যা হয়নি। হরতালকারী কাউকে দেখিনি।’

সিএমপির সংশ্লিষ্ট আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর সারাবাংলাকে জানান, পণ্যবাহী যানবাহন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করছে। কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতার তথ্য পুলিশের কাছে আসেনি।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার-বান্দরবানের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটেও সকালে গণপরিবহন ছেড়ে যায়নি।

শাহ আমানত সেতু এলাকায় সকাল ৮টার দিকে আসেন বাঁশখালীর সরকারি আলাওল কলেজের প্রভাষক রাজশ্রী আইচ। কিন্তু বাস কিংবা অন্য কোনো পরিবহন না পেয়ে তিনি বাসায় ফিরে যান। রাজশ্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুর্গাপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার ছুটি শেষে আজ কলেজ খোলার প্রথমদিন ছিল। হরতাল হলেও কলেজ খোলা। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। একঘন্টা অপেক্ষা করে এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগরের ভেতরে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। শাহ আমানত সেতু, বাকলিয়া, কাজীর দেউড়ি এলাকায় কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা এবং খালাসের পর পরিবহন স্বাভাবিক আছে। সকাল থেকে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন ছেড়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও উপস্থিতি কম। দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা আছে।

এদিকে সকালে নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে বিএনপি। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মিছিলটি বাকলিয়ার দিকে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে পরে সরে যায়। সকালে নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে একদল পিকেটার হরতালের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে পরিত্যক্ত কিছু কাগজ ও বস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এর বাইরে নগরীর আরও কোথাও পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

নগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল-পথসভা হয়েছে। আমাদের পিকেটিং করতে হচ্ছে না, সাধারণ মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল করছে। দূরপাল্লার যানবাহনের সব কাউন্টার বন্ধ আছে। শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা, গাড়ি নেই। এতে প্রমাণ হয়েছে, সাধারণ মানুষ হরতালে সমর্থন দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি আরও জোরালো হয়েছে।’

ইদ্রিস আলী’র অভিযোগ, সকালে নগরীর বাটালি রোডে নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় বাসার রুমে-রুমে গিয়ে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশ দুর্ব্যবহার করেন। তবে আবুল হাশেম বক্কর এসময় বাসায় ছিলেন না।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন