বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রথম ১৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার গাড়ি পার

October 29, 2023 | 9:59 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: হরতাল শেষ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে রীতিমতো গাড়ি পারাপারের ঢল নেমেছে। টানেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে গাড়ির চাপ বেড়েছে। এ সময় মাত্র দুই ঘণ্টায় এক হাজার গাড়ি টানেল পার হয়েছে। আর সকালে টানেল খোলার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টায় টোল আদায় ছয় লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।

টানেলের কর্মকর্তাদের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৮৭টি গাড়ি টানেল পার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে মোট ছয় লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা। এর মধ্যে রাত ৮টা পর্যন্ত শেষ দুঘণ্টায় টোল আদায় হয়েছে দুই লাখ ২৭ হাজার ৩০০ টাকা।

আরও পড়ুন- খুলল টানেল-ঘুচল প্রতীক্ষা, উচ্ছ্বসিত চালক-যাত্রীরা

বিজ্ঞাপন

এর আগে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুই হাজার ৬৪টি গাড়ি টানেল পার হয় এবং টোল আদায় হয় চার লাখ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা। এ হিসাবে সন্ধ্যা ৬টায় হরতাল কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরের দুই ঘণ্টায় টানেল পার হয়েছে এক হাজার ২৩টি গাড়ি।

এর আগে টানেল খুলে দেওয়ার পর ভোর ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত প্রথম ঘণ্টায় ৭২টি গাড়ি চলাচল করে। টোল আদায় হয় ১৯ হাজার ৫০ টাকা। ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত আরও ৪৯টি গাড়ি অতিক্রম করে। টোল আদায় হয় ১১ হাজার ২০০ টাকা।

এ ছাড়া দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ৪৮৬টি গাড়ি থেকে এক লাখ ১৭ হাজার ২১৫ টাকা, ৩টা পর্যন্ত ৭৯৩টি গাড়ি থেকে এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত এক হাজার ১৬১টি গাড়ি থেকে টোল আদায় হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৩৫০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোর ৬টায় টানেল খুলে দেয়ার পর প্রথমিক গাড়ির চাপ ছিল। এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাড়ির তেমন চাপ ছিল না। ৪টার পর থেকে গাড়ির সংখ্যা আবারও বাড়তে থাকে। হরতাল শেষ হওয়ার পর যানবাহনের চাপ তৈরি হয়েছে। রাত ৮টায় এ মুহূর্তে আমাদের সবগুলো টোল বুথ এনগেজড হয়ে আছে। তবে গভীর রাতে যানবাহনের সংখ্যা কমতে পারে। সেটা তখন পরিস্থিতি দেখে টানেলের ভেতরের লেন কমিয়ে দেয়া হতে পারে।’

রোববার ভোর ৬টায় আনোয়ারা প্রান্ত দিয়ে প্রথম টানেল পাড়ি দেন মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা। পতেঙ্গা প্রান্ত দিয়ে টানেল পাড়ি দেয় ‘বিডি বাস লাভার’ নামে একটি গ্রুপের সদস্যদের বহনকারী মারশা পরিবহনের একটি বাস।

ভোরে টানেল পাড়ি দেওয়ার প্রতীক্ষায় রাত থেকেই টানেলের দুপ্রান্তে অপেক্ষা করছিল বিভিন্ন যানবাহন। এ ছাড়া শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে অনেক যাত্রী সরাসরি টানেল পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গন্তব্যে গেছেন। দক্ষিণের অনেক বিমানযাত্রী চট্টগ্রাম শহর এড়িয়ে আনোয়ারা প্রান্ত দিয়ে টানেলে প্রবেশ করে পতেঙ্গা দিয়ে বের হয়ে সরাসরি বিমানবন্দরে পৌঁছে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

টানেল পার হয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন গাড়ির চালকরা, যাত্রীরাও। কেউ বলেছেন, টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে গিয়ে তাদের মনে হয়েছে তারা ইউরোপের মধ্যে আছেন। আবার কেউ বলেছেন, ‘আমাদের দেশটা বিদেশ হয়ে গেছে’।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ১২টা ২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে নিজ হাতে টোল পরিশোধ করে টানেল পার হন। মাত্র তিন মিনিটে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেল পাড়ি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হন দক্ষিণ প্রান্তে কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়। এদিন প্রধানমন্ত্রীর বহরে ২১টি গাড়ি ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোট চার হাজার ২০০ টাকা টোল পরিশোধ করেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য গত আগস্টে টোল হার চূড়ান্ত করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। রোববার (২৯ অক্টোবর) টানেল খুলে দেয়ার দিন থেকে সেটি কার্যকর হয়েছে।

টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার), জিপ ও পিকআপকে দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা করে। আর মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে।

এ ছাড়া টানেলে দিয়ে যেতে হলে ৫ টন পর্যন্ত ট্রাককে ৪০০ টাকা, ৫ দশমিক ১ টন থেকে ৮ টনের ট্রাককে ৫০০, ৮ দশমিক ১ টন থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। তিন এক্সেলবিশিষ্ট ট্রাক-ট্রেইলরের টোল চূড়ান্ত করা হয়েছে ৮০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রাক-ট্রেইলরকে দিতে হচ্ছে ১০০০ টাকা। এর বেশি ওজনের ট্রাক-ট্রেইলরকে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হবে।

কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে টানেলের নির্মাণ কাজ করেছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।

৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই সুড়ঙ্গ পথের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩৫ ফুট, উচ্চতা ১৬ ফুট। টানেলে দুটি টিউব দিয়েই যানবাহন চলাচল করবে। একটির সঙ্গে আরেকটি টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে।

টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে। এ প্রান্তেই রয়েছে টোলপ্লাজা। উভয় দিকে আছে ওজন স্কেল।

সারাবাংলা/এসএন/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন