বিজ্ঞাপন

এক রাতে ২ চিকিৎসক খুন: জামায়াতের অর্থদাতা ছিলেন দুজনেই

November 2, 2023 | 8:12 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীতে এক রাতে দুই চিকিৎসক হত্যা রহস্যের কোনো কিনারা এখন পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। দুটি হত্যাকাণ্ডেই থানায় মামলা হলেও জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি এখনো। পুলিশ বলছে, রহস্য উদ্ঘাটনে জন্য কাজ চলছে। বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে চলছে তদন্ত।

বিজ্ঞাপন

গত রোববার (২৯ অক্টোবর) রাতে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে খুন হন দুই চিকিৎসক। তাদের একজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের যৌন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ গোলাম কাজেম আলী আহমদ (৪২)। আরেকজন পল্লী চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলাল (৪৫)।
নহত দুই চিকিৎসকের মধ্যে গোলাম কাজেম রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। রামেক শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন তিনি। এরশাদ আলী দুলালও ছিলেন জামায়াতের সমর্থক। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুই চিকিৎসকই ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর অর্থদাতা।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ডা. কাজেম ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করলেও তিনি জামায়াতের কোনো পদে ছিলেন না। তবে নিয়মিত জামায়াতকে অর্থ সহায়তা করতেন। পল্লী চিকিৎসক দুলালও জামায়াতের কোনো পদে ছিলেন না। তিনি জমি কেনাবেচার কাজ করতেন। কৃষ্টগঞ্জ বাজারে তার ওষুধের দোকান ছিল। জমি কেনাবেচার অর্থ দিয়ে তিনি জামায়াতকে সহায়তা করতেন।

পুলিশের ওই সূত্রটি আরও বলছে, ডা. কাজেমের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় এলাকায় ইসলামী জালসা আয়োজন করতেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ডা. কাজেমকে হত্যার পরদিন (সোমবার) দুপুরে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারে মানববন্ধন করেছেন তার এলাকার বাসিন্দারা। দেবীনগর স্টুডেন্টস কমিউনিটির ব্যানারে মানববন্ধনে হত্যার বিচার ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ও সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দুটি ঘটনাতেই দুর্বৃত্তরা মাইক্রোবাস নিয়ে এসেছিল। কাপড়ে তাদের মুখ ঢাকা ছিল। প্রতিটি ঘটনাতেই বেশ কয়েকজন ছিল। তবে দুটি ঘটনার কোনোটিতেই জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

পল্লী চিকিৎসক দুলালের দোকান নগরীর উপকণ্ঠ চন্দ্রিমা থানার কৃষ্টগঞ্জ বাজারে। ওই দোকানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটের পর মুখে কাপড় পেচিয়ে পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি মাইক্রোবাসে করে এসে দোকান থেকে এরশাদ আলীকে তুলে নিয়ে যায়। ওই দিন রাত ৯টার দিকে সিটিহাট এলাকায় রাস্তার পাশে তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়।
এর তিন ঘণ্টা পর রাজশাহী নগরীর বিলসিমলা রাজিব চত্বর এলাকায় ছুরিকাঘাত করা হয় ডা. কাজেমকে। যারা ছুরিকাঘাত করে তাদের মুখও কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গ্লোব ফার্মার মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ শাহীনুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। শাহীনের দেওয়া ভাষ্যের বরাতে পুলিশ জানায়, রাতে শাহীনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে চেম্বার থেকে বাসায় ফিরছিলেন ডা. কাজেম। পথে পেছন থেকে একটি মাইক্রোবাস এসে তাদের গতিরোধ করে। এরপর মাইক্রোবাস থেকে তিনজন ব্যক্তি নেমে আসেন। একজন ডা. কাজেমের পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। পরে ডা. কাজেম মোটরসাইকেল থেকে নামলে একজন তার বুকে ছুরিকাঘাত করেন। এরপর হামলাকারী সবাই মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনার পর শাহীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে নিয়ে হওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম।
চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, পল্লী চিকিৎসক দুলাল হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। তার বড় ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমরা এখনো তদন্ত করছি।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, একই দিনে দুই চিকিৎসক হত্যার ঘটনা আমাদেরও চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কী কারণে, কারা এ হত্যা করেছে সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমই/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন