বিজ্ঞাপন

যশোরে বিএনপির ৫ হাজার নেতাকর্মী আত্মগোপনে

November 3, 2023 | 10:38 am

তহীদ মনি, যশোর

যশোর: যশোরে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মী রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। জেলা বিএনপি নেতাদের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে বাড়ছে নাশকতার অভিযোগে মামলা। তারা আরও অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিনে যশোরের আট উপজেলায় নাশকতার নামে রাজনৈতিক মামলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী। তারপরও হামলা, মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করছেন।

বিজ্ঞাপন

যশোর জেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের পর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শুরু হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে। ২৮ অক্টোবরের পর যশোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। অনেককে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এজন্য এখন বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই এখন ঘরছাড়া। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানে-ওখানে। মামলার আসামিরা তো বটেই, মামলা নেই-এমন নেতাকর্মীও বাসায় থাকার সাহস পাচ্ছেন না। ফলে টানা অবরোধের দলীয় কর্মসূচিতেও দেখা মিলছে না অনেক নেতা-কর্মীর। মাঝে মধ্যে ঝটিকা মিছিলে হাজির হয়ে ফটোসেশন শেষে আবার হাওয়া যাচ্ছেন তারা। অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, গত রোববার যশোর নড়াইল রোডে দুটি বাসে ককটেল ও লাঠি পেট্রোল জব্দের মামলায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলার শীর্ষ ৮৭ নেতাকে আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া জেলায় ধরপাকড়ও চলছে। গত পাঁচ দিনে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া মামলাটিতে অজ্ঞাত আরও অনেক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এ পর্যন্ত দায়ের করা বেশির ভাগ রাজনৈতিক মামলায়ই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এটিই বেশি উদ্বেগের। নেতাকর্মীদের যে কাউকে গ্রেফতারের পর এসব মামলার আসামি করা হচ্ছে।

হরতাল-অবরোধের মাঝে পুরোনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলার আতঙ্কও বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। মাঠে নামলেই মামলা ও গ্রেফতারের মখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নাম না প্রকাশে জেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা জানান, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকেই যশোরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসছেন না। ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতালে মিছিল হলেও সেটা খুব সকালে। তাও আধা ঘণ্টা সময়ের মধ্যে পুলিশের বাধায় শেষ হয়। এরপর টানা তিনদিনের অবরোধেও খুব সকালে ঝটিকা মিছিল বা সন্ধ্যারাতে মিছিল করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

তারা আরও জানান, অবরোধ সমর্থনে শহর ও শহরতলীর দুই-একটি মিছিল হলেও উপজেলাগুলোতে কর্মসূচি নেই বললেই চলে। শহরের লালদীঘি পাড়ের জেলা বিএনপি কার্যালয়ও গত এক সপ্তাহ ধরে নেতাকর্মী শূন্য। বন্ধ রয়েছে দলীয় কার্যালয়।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, রাজপথে পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। আর গ্রেফতার ও হামলাতো আছেই। এসব এড়াতে অনেক নেতা নিজ বাসায় না থেকে অন্যত্র রাত যাপন করছেন। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অত্যাচারে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলো এখন কার্যত নেতা-কর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে।

যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেবুল হক সাবু বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগপর্যন্ত যশোরে নাশকতার ১৩টি মিথ্যা মামলা ছিল। ২৮ অক্টোবরের পর জেলায় আরও সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। মিথ্যা এসব মামলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ক্ষমতাসীনরা নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা করছে। রাজপথে অস্ত্র লাঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহড়া দিচ্ছে; সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা কিভাবে রাজপথে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, একদিকে অস্ত্র লাঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে মহড়া, অন্যদিকে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে আটক করছে। ফলে বিএনপির আন্দোলন সফল করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও কর্মীরা মাঠে আছে। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি হঠকারী কিছু না করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে ভোরবেলা ফাঁকা মাঠে ঝটিকা মিছিল করছে। তাদের আন্দোলন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

তিনি বলেন, হরতাল, অবরোধের নামে বিএনপি যেন কোনো ধরণের নৈরাজ্য ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ মাঠে রয়েছে। বিএনপি হামলা, ভাংচুর নাশকতায় লিপ্ত হলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, আন্দোলনের নামে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আর যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে শুধুমাত্র তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। কাউকে হেনস্তা করা হচ্ছে না।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন