বিজ্ঞাপন

অভিনয়শিল্পী হিমুর আত্মহত্যার নেপথ্যে

November 3, 2023 | 9:11 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমু (৪১) বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন। গণমাধ্যমে আত্মহত্যা নিয়ে তেমন কোনো তথ্য না এলেও হিমুর আত্মহত্যার পেছনে রহস্য আছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেল, বেশ কয়েকটি কারণে অভিনেত্রী হিমু গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তার বন্ধু (প্রেমিক) জিয়া উদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের হিমুর আত্মহত্যার পেছনের রহস্য নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘হিমুর খালার দায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় উরফি জিয়াকে রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উরফি জিয়ার নিজ বাসা পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে। তিনি গার্মেন্টস কেমিক্যালের ব্যবসা করেন।’

উরফি জিয়ার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব পরিচালক বলেন, ‘২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতো বোনকে বিয়ে করেন জিয়া। কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়তার সুবাদে জিয়ার সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। খালাতো বোনের সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়ার মধ্যে যোগাযোগ ছিল। পরবর্তীতে জিয়া অন্য জায়গায় বিয়েও করেন। গত ৪ মাস ধরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে জিয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হিমুর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়শ ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডা হতো। এ ছাড়াও গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেন বলে জানিয়েছে উরফি জিয়া। এ নিয়েও তাদের মনোমালিন্য হতো।’

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার জিয়া জানান, গত ২ নভেম্বর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যায়। পরে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে ভিকটিম হিমু ও জিয়ার মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হিমু ভাঙচুর করেন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হিমু রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সঙ্গে আগে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানান।

জিয়া আরও জানায়, হিমু পূর্বেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে জানালেও সে আত্মহত্যা করেননি। এবারও আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জিয়াকে জানালে তিনিও বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি। কিন্ত হিমু একটু পর বেঁধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে জিয়া তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় তিনি পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে হিমুকে নিচে নামান। পরে জিয়া বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক হিমুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়া ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল ক্যামিকেলের ব্যবসা করতেন। ঘটনার দিন ভিকটিম হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে সে হিমুর ব্যবহৃত দুইটি আইফোন ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে সে হিমুর গাড়ি উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে এ রেখে দেয়। হিমুর মোবাইল ফোন দুইটি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যান। গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মিহিরকে আমরা আটকের চেষ্টা চালাচ্ছি। তাকে আটক করতে পারলে আত্মহত্যার পেছনের আরও কিছু তথ্য বেরিয়ে আসবে। কারণ ২০১৮ সালে একই বাসাতে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকেও হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও মিহিরই ছিল। এবারও মিহির ছিল। এছাড়া মিহির মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মূলত প্রতিশ্রুতির বিয়ে না করা, জুয়ায় আসক্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া, ক্যারিয়ার থেকে ছিটকে পড়া এবং আত্মহত্যা প্রবণতা থেকেই হিমু আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হিমু গত চার মাসে অন্তত ২১ লাখ টাকা জুয়ায় হারিয়েছেন। যার সব টাকাই উরফি জিয়া দিয়েছেন বলে দাবি তার। এ ছাড়া গত ৩/৪ বছরে আরও অনেক টাকা দিয়েছেন জিয়া।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন