বিজ্ঞাপন

বুধ-বৃহস্পতি ফের অবরোধ, আগামী সপ্তাহে অসহযোগ!

November 6, 2023 | 2:00 pm

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষে ২৪ ঘণ্টা বিরতির পর ফের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ ডাকতে যাচ্ছে বিএনপি। বুধবার ভোর ৬ টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬ টা পর্যন্ত চলবে তৃতীয় দফার এই অবরোধ। এরপর শুক্র-শনিবার বিরতি দিয়ে রোববার (১২ নভেম্বর) ভোর থেকে টানা কর্মসূচিতে যাবে দলটি। এ ক্ষেত্রে অসহযোগ আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে, বিএনপির নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘অসহযোগ আন্দোলন’ সম্পর্কে দলটির সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের তেমন কোনো ধারণা নেই। তারা বিষয়টিকে হরতাল-অবরোধের মতো করে ভাবছেন।

পাক-ভারত-বাংলা উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক পরিচালিত গণ-আইন অমান্য আন্দোলন হল অসহযোগ আন্দোলন। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই আন্দোলন ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম ও প্রকৃত গণভিত্তিক জাতীয় আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশ অমান্য ও সরকারি কাজে অসহযোগিতা করাই ছিল এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। এই আন্দোলনকে ‘অহিংস অসহযোগ আন্দোলন’ও বলা হয়।

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষ ভাগে ভারতীয় রাজনীতিতে মহাত্মা গান্ধীর আবির্ভাব সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ১৯২০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণের পর তিনি জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন।

বিজ্ঞাপন

ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে যখন ন্যায় সঙ্গত বিবেচনা লাভের সব আশা ফিকে হয়ে যায়, তখন শাসক শ্রেণির প্রতি ভারতীয়দের সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাহার করে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজ্যের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলার উদ্দেশ্যে যে আন্দোলনের ডাক দেন মহাত্মা গান্ধী, তা-ই ‘অসহযোগ আন্দোলন’ নামে পরিচিত।

এর পর, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। চলে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। মোট ২৫ দিন স্থায়ী হয় এই আন্দোলন।

এ আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা। অসহযোগ আন্দোলনের সময় ক্রমশ পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক প্রশাসনের ওপর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে সেনানিবাসের বাইরে পূর্ব পাকিস্তান কার্যত শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে চলে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রমতে, সরকারের ওপর স্নায়ু চাপ বাড়ানোর জন্য অবরোধের পর অসহযোগ আন্দোলনের আওয়াজ তুলছে বিএনপি। যদিও দলটির শীর্ষ নেতাদের আত্মগোপন এবং বাকিদের কারাবরণের মধ্যে অসহযোগ আন্দোলনের আওয়াজন স্রেফ ‘কথার কথা’ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। দলের এই ‘ছন্নছাড়া’ অবস্থার মধ্যে অসহযোগ আন্দোলন বাস্তবসম্মত হবে না বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে, আরও কিছু দিন হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পর অসহযোগ আন্দোলনের কথা ভাবা উচিত বিএনপির।

দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এরইমধ্যে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া মিলেছে বিএনপির আন্দোলনে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। সরকারের চাপে মালিক পক্ষের কেউ কেউ দুয়েকটা গাড়ি রাস্তায় বের করলেও যাত্রী পাচ্ছে না। ফলে, ধীরে ধীরে সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় সরকারের নির্দেশ আর মানবে না কেউ। তখন অসহযোগ আন্দোলনের একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। ওই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে অসহযোগ আন্দোলনের কথা ভাবা যাবে।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সরদার নুরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতদূর জানি, তাতে অবরোধ কর্মসূচিই চালিয়ে যাবে বিএনপি। অসহযোগ আন্দোলন বোধ হয় এখনই আসবে না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে-আন্দোলন আরেকটু দানা বাঁধুক, তারপর অসহযোগ আন্দোলনের কথা ভাবা যাবে।’

সরকারের পক্ষ থেকেও ধারণা করা হচ্ছে— অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আগামী সপ্তাহে না হোক, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অসহযোগ আন্দোলনে যাবে দলটি। সরকারকে অসহযোগিতা করার সব পথ অবলম্বন করবে তারা। তার আগেই বিএনপির নেতৃত্বকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ধরপাকড় অভিযান বাড়াবে সরকার। এরইমধ্যে সারাদেশে ২২৮ প্লাটুন বিজিবি এবং র‌্যাবের ৪৬০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন