শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

লোকাল করেসপন্ডেন্ট

সাভার: রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় বাসিন্দারা। দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার (৬ নভেম্বর) থেকে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ দিন বন্ধ থাকবে বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী— আগামী ৬ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় কবে শুরু করা হবে, তা পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এজাজ উর রহমান বলেন, ‘গত ২৭ অক্টোবর আমাদের শিক্ষার্থী অন্তরকে খাগান এলাকায় মারধর করে গুরুতর আহত করে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ নভেম্বর মারা যান অন্তর। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। সেসময় বাইরে থেকে বহিরাগতরা (এলাকাবাসী) ইউনিভার্সিটির একটি ভবনে হামলা করে এবং ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভবনের গ্লাস ভাঙচুর করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর পর শিক্ষার্থীরা বাইরে গেলে তারা হামলা করে। এতে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইউনিভার্সিটির পেছন গেইট এলাকায় বেশ কিছু দোকান ভাঙচুর করে। আমরা ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম আজ থেকে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা ও শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো মামলা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।’

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হাবিব কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। এখন ক্যাম্পাস ফাঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি মিটিংয়ে বসবে। তারপর পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন পরিস্থিতি শান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেন এবং সর্বশেষ দুপুর ১২টার দিকে পুরো ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে যায়।’

এর আগে, রোববার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী সাত দিন (১২ নভেম্বর পর্যন্ত) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সব শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ বাসায় বা নিরাপদ স্থানে থেকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করে পড়াশোনা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর ড্যাফোডিলের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম অন্তরকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে খাগান এলাকায় ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজু হাসপাতাল পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে যান।

এরপর পরিবারের তত্ত্বাবধানে তাকে ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন গত ২ নভেম্বর মারা যান অন্তর। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। এ মামলার আসামি রাহাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

এর জের ধরে রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর সাভারের বিরুলিয়ার খাগান এলাকায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় বাসিন্দারা। হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। সন্ধ্যার পর এলাকাবাসীর সঙ্গে ফের আরেক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে শিক্ষার্থীদের।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম