বিজ্ঞাপন

বিএনপি এখন রাজনীতির ‘সার্কাস পার্টি’

November 9, 2023 | 1:09 pm

তাপস হালদার

বাংলাদেশে একসময় আনন্দ বিনোদনের জন্য সার্কাস অনেক জনপ্রিয় ছিল। সার্কাসের প্রধান আকর্ষণ ছিল জোকার। তিনি কথা ও অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে মানুষকে হাসিয়ে আনন্দ দিত। প্রযুক্তির যুগে সার্কাস বিলুপ্তির পথে। সাম্প্রতিক কালে বিএনপির কিছু কার্যক্রম মানুষের মাঝে সার্কাসের বিনোদন নিয়ে এসেছে। বিএনপির নেতাদের কথা ও আচরণ অনেক ক্ষেত্রে সার্কাসকের জোকারকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহাসমাবেশের পর সন্ধ্যায় হঠাৎ করে বিএনপির পল্টন অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘ভূয়া উপদেষ্টা’র আবির্ভাব হলো। সরকার ও আওয়ামীলীগকে ভয় দেখাতে গিয়ে মিয়া আরেফী নামে একব্যক্তি জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে বক্তব্যে বলেন, র‌্যাবকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে সহায়তা করেছি। এখন পুলিশ ও আনসার বাহিনীকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার পরামর্শ দিবো। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। মার্কিন সরকার বিএনপির সাথে আছে। ‘বিষয়টি জানাজানি হলে মার্কিন দূতাবাস জানায়,তাদের কোনো কর্মকর্তা বিএনপি অফিসে যায়নি। এবং এই নামে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো উপদেষ্টা নেই।দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, ‘এধরণের খবর পুরোপুরি অসত্য।’ পরে বিএনপির হুঁশ হয়। বলা হয়, এ বিষয় সম্পর্কে বিএনপি অবগত নয়। অথচ বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন হচ্ছে,নেতারা পাশে বসে আছে। এবং ভিডিওতে দেখা গেছে সাংবাদিক সম্মেলনের আগে মিয়া আরেফীকে ব্রিফ করছেন বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ। এই ঘটনা প্রমান করে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব। তাদের আন্দোলন লোক দেখানো, মার্কিন জুজুই আসল শক্তি।

বিএনপি জনগণের উপর আস্তা নেই বলেই বিদেশিদের পদলেহন করছে। এমন কি তাদেরকে প্রকাশ্যে আব্বা ডাকতেও দ্বিধা করছে না। একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিএনপির জন্য ভগবান ও অবতার বলে মন্তব্য করে দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেছেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদের জন্য অবতার হয়ে এসেছেন। তার তো আমাদের আরো সাহস দেয়া দরকার, বাবারে তুই আমাদের বাঁচা,রক্ষা কর। তার বলতে হবে-আমি আছি তোমাদের সঙ্গে, তোমরা ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি, আমরাও ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি। পিটার হাস-বাবা ভগবান আসালামু আলাইকুম।’

বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসমাবেশের দিনের সংঘর্ষ নিয়ে যত প্রকার গুজব ছড়ানো হয়েছিল সবই বুমেরাং হয়ে গেছে। সংঘর্ষে নিহত শামীম মোল্লাকে বিএনপি মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি বলে প্রচার করেছে। অথচ শামীমের বাবা ইউসুফ মিয়া বলেছেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। সে ১৮ বছর যাবৎ একজন ডাক্তারের গাড়ী চালায়। শনিবারও সে ডিউটিতে যায়, কিন্তু মালিক গাড়ী বের না করায় সে ফেরত আসে। পথের মাঝে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বিএনপি থেকে বলা হলো কাকরাইল মোড়ে বাসে পুলিশই আগুন গিয়েছে। কিন্তু ভিডিও দেখা গেছে ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরা যে যুবক আগুন দিচ্ছে তিনি রবিউল ইসলাম নয়ন, যুবদল ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব। আওয়ামী লীগের একনেত্রীকে মেরে তাদের নেত্রী প্রহৃত হয়েছে বলে প্রচার করেছে কিন্তু আক্রান্ত সেলিনা ইয়াসমিন পপি নিজেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এবং পুলিশে অভিযোগ করেছেন, তিনি পল্টন থানা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরিক্ষিৎ নেত্রী। সেদিন তিনি আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যাওয়ার পথে আরামবাগে তার উপর বিএনপি সন্ত্রাসীরা হামলা করে। তারা তাকে চিনেই হামলা করেছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। অথচ তাকেও বিএনপি তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিএনপি কর্মী বলে চালিয়ে দিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির মহাসচিব সহ অন্যান্য নেতারা তো বারবার বলে আসছে, শেখ হাসিনা আর পালানোর পথ পাবে না। অথচ এখন নিজেরাই পালিয়ে আছে। গত বছর আল্টিমেটাম দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটবে। সেদিন থেকেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে। মিথ্যা প্রচারণার গুজব এমন ভাবে তৈরি করলো যে তাদের কর্মীরা বিশ্বাস করতে শুরু করলো ১০ ডিসেম্বর সরকারের পতন হবে। অথচ বিএনপি নেতারা বুঝেননা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় বাসায় আছেন। তিনি চাইলে যেকোনো সময় আবার কারাগারে পাঠাতে পারেন। অন্যদিকে তারেক জিয়াও সাজাপ্রাপ্ত আসামী হয়ে বিদেশে পলাতক আছেন। তাদের পক্ষ্যে নেতৃত্ব তো দূরের কথা মুক্ত ভাবে রাজনীতির করার সুযোগই নেই। এবার আবার জিগির তুলেছিল ২৮ তারিখই হবে আওয়ামী লীগের পতন যাত্রা। এদিনের পর আর শেখ হাসিনা থাকবে না। ৩ নভেম্বরের মধ্যে আমেরিকা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছে। শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে যাওয়ার জন্য রেড়ি হয়ে আছে। অথচ দেখা গেল, ২৮ তারিখ সহিংসতার পর বিএনপির নেতারাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যেসব নেতারা সকাল-বিকাল গলাবাজি করতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেনেহিঁচড়ে নামাবে সেসকল নেতারা পুলিশের ভয়ে বাসাবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। তারপর থেকে আর তারা রাজনীতির মাঠেই নাই। মাঝে মাঝে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে জনগণের মধ্যেই ভীতি সঞ্চার করতে চোরাগোপ্তা হামলা করছে। এটাই এখন তাদের রাজনীতি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার অর্থায়নে বিদেশে অবস্থানকারী কিছু অপরাধী যারা অনৈতিক কাজ করে চাকরিচ্যুত, ফৌজদারি মামলার পলাতক আসামি, ভুঁইফোড় সাংবাদিক, রাজাকারের সন্তানেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে বসে গুজবের মাধ্যমে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই করে যাচ্ছে। এদের কথা শুনলে মনে হবে দেশে কোনো সরকার নেই,যেকোনো সময় বিএনপি ক্ষমতায় আসছে। কিছু লোক এসব ভন্ডদের প্রচারণায় বিভ্রান্তও হয়েছিল কিন্তু এসব মিথ্যা প্রচারণা তাদের বিরুদ্ধেই বুমেরাং হয়ে গেছে। কারণ প্রত্যেক গুজবের একটি মাত্রা থাকে। যখন সেই মাত্রা অতিক্রম করবে, তখনই গুজব হিসেবে উল্টো যারা রটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বুমেরাং হিসেবে কাজ করে। অনবরত মিথ্যা গুজব রটিয়ে বিএনপি নিজেই ধরা খেয়েছে। সাধারণ জনগণ তাদের মিথ্যাচার এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে। বিএনপির পেইড এজেন্টদের মানুষ চিনতে পেরেছে। এসব গুজব আর মানুষ বিশ্বাস করেনা, বিনোদন হিসেবে দেখে থাকে।

অস্বীকার করার উপায় নেই, আওয়ামী লীগ বিরোধীদের একটি প্লাটফরম ছিল বিএনপি। শুধুমাত্র সঠিক নেতৃত্বের কারণে দলটি সার্কাস পার্টিতে পরিনত হয়েছে। এখনও একশ্রেণির অন্ধ সমর্থক নেতাদের সরকার পতনের গুজবকে বিশ্বাস করে বসে আছে। প্রশ্ন থাকতে পারে এই অন্ধ সমর্থকরা এখনও কেন বিএনপিকে বিশ্বাস করে? তাদের উদ্দেশ্য সার্কাস দলের গাধাকে নিয়ে একটি গল্প বলে আজকের লেখা শেষ করবো। সার্কাসে একটি গাধা ছিল তার সাথে কথা হয় অন্য একটি পালিত গাধার। দুই গাধার কথোপকথনে সার্কাসের গাধা বললো, খুব কষ্টে আছি ভাই। খেতে পাই না। আবার বকাঝকা খাই। পালিত গাধা বললো, তাহলে এই দল ছেড়ে যাওনা কেন? সার্কাসের গাধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, একটা আশায় আছি ভাই। সার্কাসের মালিকের একটি সুন্দরী মেয়ে আছে, সে দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। মালিক তাকে বলেছে, দড়ির উপর ঠিক মতো হাঁটিস। যদি পড়ে যাস, তাহলে তোকে গাধার সাথে বিয়ে দিব। আশায় আছি ভাই, যদি দড়িটা ছিঁড়ে যায়—।

বিজ্ঞাপন

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন