বিজ্ঞাপন

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ নিয়ে বিতর্ক কি চলতেই থাকবে?

November 14, 2023 | 3:48 pm

রাকিবুল হাসান

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। ২০১০ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পান পূর্ণিমা। ছবিটিতে তার চরিত্রের সঙ্গে ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবি ‘বিচ্ছু’তে রানি মুখার্জি অভিনীত চরিত্রের নব্বই ভাগ মিল ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। একই ছবিতে খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পান মিজু আহমেদ। তার চরিত্রের সাথে ‘বিচ্ছু’ ছবির খল অভিনেতা আশিষ বিদ্যার্থী অভিনীত চরিত্রের সাদৃশ্য ছিল অনেকখানি।

বিজ্ঞাপন

একই বছর ‘নি:শ্বাস আমার তুমি’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার পান আফজাল শরীফ। এই ছবিটি ছিল কলকাতার ‘আই লাভ ইউ’ ছবির ফ্রেম টু ফ্রেম কপি। যা আবার তেলেগু ভাষার ‘নুভোসতানান্তে নিনোদ্দান্তানা’ (২০০৪) ছবির রিমেক। ‘নি:শ্বাস আমার তুমি’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গীতিকারের সম্মান লাভ করেন কবির বকুল। গানের কথা চুরি না হলেও যে গানের জন্য এই পুরস্কার, সেই গানটির সুর নিয়ে ছিল নকলের অভিযোগ।

২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘তারকাঁটা’ সিনেমায় সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান মৌসুমী। অথচ তিনি ছবিটির মূল অভিনেত্রী ছিলেন না। ওই সিনেমায় তাকে দেখা যায় আরিফিন শুভর বড় বোনের চরিত্রে। শুভর বিপরীতে ছিলেন মিম। একই বছর মুরাদ পারভেজের ‘বৃহন্নলা চলচ্চিত্র’টি একাধারে সংলাপ, কাহিনি এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র─তিনটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার পর জানা যায় এর কাহিনি চুরি করা। উল্লেখ্য, পুরস্কার ঘোষণার আগে এই ছবিটিকে সরকার অনুদানও দিয়েছিল।

২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘জালালের গল্প’ ছবিতে ‘শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান’ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন শফিক। অথচ ওই ছবিতে তৌকীর আহমেদকে গোঁফ লাগানো আর তার মুখের ঘাম মুছে দেওয়া ছাড়া মেকআপের কোনও কাজ ছিল না। ৪৫ দিন শুটিংয়ে তিনি মাত্র ৪ দিন এই কাজ করে ইউনিট থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে বাধ্য হয়ে ছবিতে তৌকীর আহমেদের গোঁফ কেটে ফেলতে হয়। এবং পুরো শুটিং হয় মেকআপম্যান ছাড়া।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘নিয়তি’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হিসেবে হাবিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছিলো অথচ তিনি সেই ছবিতে কাজই করেননি। এ বিষয়ে নৃত্য পরিচালক হাবিব বলেছিলেন, আমি এই ছবিতে কাজই করিনি। কিন্তু আমাকে পুরস্কার দেওয়া হলো। এই পুরস্কার গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সমালোচনার মুখে সেবার চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা থেকে ‘সেরা নৃত্য পরিচালক’র ক্যাটাগরিই বাদ দেওয়া হয়েছিল।

২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ফজলুর রহমান বাবু ‘গহীন বালুচর’ সিনেমায় অভিনয় করে নির্বাচিত হয়েছেন ‘শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা’। প্রকৃতপক্ষে তিনি খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। একই বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘সেরা সম্পাদক’ হিসেবে ঘোষিত যার নাম ঘোষিত হয় সেই মো. কালাম ভারতের নাগরিক।

২০১৮ সালে ‘কমলা রকেট’ সিনেমার জন্য মোশাররফ করিম পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার। কিন্তু তিনি চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মোশাররফ করিম তার পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য জুরি বোর্ড সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিন গানের পুরস্কারপ্রাপ্তদের নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। শ্রেষ্ঠসঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ঘোষিত বেলাল খানের ‘বিশ্বাস যদি যায় রে’ গানটির প্রকৃত সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে দাবি করছেন এম রহমান নামের একজন সঙ্গীতপরিচালক। শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত সোমনূর মনির কোনালের গাওয়া গানের কথা ও সুর নকলের অভিযোগ উঠেছে। কোনালের এই পুরষ্কার বিতর্কে বিব্রত ছবিটির প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল তখন বলেছিলেন, অন্য একটি সিনেমা থেকে দুটি জনপ্রিয় লাইন এ গানে ইউজ করা হয়েছে। এ গান কেমন করে পুরস্কার পেল বুঝলাম না। শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবির বকুলের গানটির প্রথম দুই লাইন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘হঠাৎ দেখা’ থেকে ‘চুরি’ করা।

একই বছর ‘বীর’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশকের পুরষ্কার দেয়া হয়েছে ফরিদ আহমেদকে। এরপরপরই এই ছবির শিল্প নির্দেশক দীপু বাউল বলেন, ফরিদ আমার শিল্প নির্দেশনায় ছবির ২টি দৃশ্য ও একটি গানের সেট তৈরি করেছেন, কোনভাবেই তা শিল্প নির্দেশনা নয়।

২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও কৈশোর নিয়ে নির্মিত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই সিনেমাটি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ সম্মাননা পেলেও সিনেমাটির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ নিয়ে বিতর্ক কি চলতেই থাকবে?

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন