বিজ্ঞাপন

তফসিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল বিএনপি

November 15, 2023 | 9:46 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল ‘চরম ঘৃণা ভরে’ প্রত্যাখ্যান করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ প্রত্যাখানের কথা জানান।

রিজভী বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশি রাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

‘দেশে একটি ভীতিকর, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনা মার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফসিল রঙ্গ জনগণ মানে না। এই নীল নকশা নির্বাচনে তফসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো দিন নির্বাচন হবে না’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারও হুশিয়ার করে বলতে চাই, এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও যে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে, তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে।’

রিজভী বলেন, ‘এই সংকটের কারণে আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে। যা জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতিদ্রুত আওয়ামী নাৎসী সরকারের পতন ঘটবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার জনগণ করবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তাকে হাস্যকর মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তার মন্ত্রীরা থাকবেন আর তার অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন ব্যাপার। আমি মনে করি, এটা ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘পর পর তিনটি ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রেখে আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর দেশকে নরকপুরীতে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনে পিষ্ঠ মানুষ তাদের ভোট ও ভাতের অধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ফিরে পেতে মরণপণ লড়াইয়ে রাজপথে নেমেছে। জনগণ ১৫ বছরের অত্যাচারের জবাব দিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘পতনের অতল গহ্বরের মুখে দাঁড়িয়ে ফের গরু-ছাগল দিয়ে নির্বাচনের পাঁয়তারা করেছে সরকার। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল একতরফা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। মানুষ রাজপথে নেমেছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে। ১৮ কোটি মানুষের এই প্রাণের দাবিকে বন্দুকের নলের মুখে উড়িয়ে দিয়ে একতরফা পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা। আর এই নির্বাচন কমিশন সব জেনে-শুনেই দেশকে এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিতে এই একতরফা তফসিল ঘোষণা করল।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের মনোনীত সিলেকশন কমিশন। তারা আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তারা জনগণের কেউ নন। এই কমিশনকে কেউ মানে না। এরা মূলত আওয়ামী কমিশন। আজ শেরে বাংলা নগরে রায়টকার, জলকামান, সাজোয়া যান নিয়ে শত শত পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি বেষ্টিত নির্বাচন ভবনে বসে আওয়ামী চেতনার নিশান বরদার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণে সিলেকশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করে গোটা দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করল।’

রিজভী বলেন, ‘অতীতে রাকিব-হুদা কমিশনের মতোই কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দলদাসত্বের চরম পরাকাষ্ট প্রদর্শন করে গণশত্রুতে পরিণত হল। তারা শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি অগ্রহণযোগ্য, একপেশে, প্রশ্নবিদ্ধ, বিরোধপূর্ণ নির্বাচনের চরম ধৃষ্টতা দেখানোর যে ঝুঁকি নিল। জনগণ এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভেবেছেন তার পা চাটা গোলামদের দিয়ে একটি পাতানো ভোট রঙ্গ মঞ্চস্থ করবেন। কিন্তু তার জেনে রাখা উচিত, এটা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ নয়। তফসিল দিলেন আর পুলিশি ভোটের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করে ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষা করবেন, এত সহজ নয়। নির্বাচনের একটা ঘোষণা দিলেন, আর নির্বাচন হয়ে গেল, এই দিবা স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হবে না।’

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন। এই সব তফসিল-টপসিল বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা। সরকারকে বলি, রাজপথের দিকে তাকিয়ে দেখেন। গোটা দেশ অচল হয়ে গেছে, অবরোধে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ঢাকা। আপনার সমস্ত রক্ষী বাহিনী কিছুই করতে পারছেন না। কীভাবে পারবেন? বাংলাদেশের জনগণ একদিকে আর আপনি আরেক দিকে।’

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন